পানির অধিকার চায় বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 18:27:15

গ্রামের কোনো নলকূপেই পানি ওঠে না। ডোবার পানি দিয়ে ভাত-ডাল রান্না করা হচ্ছে। দুই কিলোমিটার দূরের একটি নলকূপ থেকে নিয়ে আসতে খাবার পানি। এভাবেই চলছে আমাদের জীবনযাপন। বুধবার রাজশাহীতে এক মানববন্ধনে জেলার তানোর উপজেলার মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালী পাড়াসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষেরা এসব কথা বলেন।

তারা বলেন, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি প্রধান বরেন্দ্র অঞ্চলটি খরা প্রবণ এলাকা। এলাকাটি দেশের অন্যান্য এলাকার থেকে ভৌগোলিক ভাবে আলাদা বৈশিষ্ট্য বহন করে। বৈশ্বিক জলবায়ুর আঞ্চলিক অভিঘাতসহ পানি সমস্যা। সেই প্রাকৃতিক উৎসগুলো দিনে দিনে দখল আর নষ্ট হওয়াসহ প্রভাবশালীদের লিজ নেয়ার কারণে সেখানে প্রান্তিক মানুষ আর আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে। একসময় গ্রাম ও শহরের প্রান্তিক মানুষগুলো প্রাকৃতিক উৎস থেকে পানি ব্যবহার করতো। কিন্তু পানির অধিকার নিশ্চিত করতে পাচ্ছেনা।

তারা আরও বলেন, উন্নয়নের ভুল পদক্ষেপের কারনে এই অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর মারাত্মকভাবে নিচে নেমে গেছে। যার ফলে রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পানির উৎস পাতকুয়া, কুয়া, সেবার নামে আর্থিক মূল্যে পানি বিক্রি করছে এখন। গ্রামগুলোতে খাবার পানিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মাফিক পানির অভাব পুকুর, দীঘি, জলাশয়, টিউবওয়েল, নলকূপগুলোতে আর পানি পাওয়া যায়না। এর স্থলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পানি দেখা দিয়েছে মারাত্বকভাবে।

বক্তরা বলেন, বারবার ধরনা দিয়েও অনেক সময় পানির অধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছেনা। তেমন একটি গ্রাম তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালী পাড়া। এখানে দীর্ঘযুগ থেকে প্রায় তিন শতাধিক আদিবাসী মাহালী সম্প্রদায়ের বসবাস। বাঁশ বেতের কাজ করে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় এই গ্রামে খাবার পানিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পানির কোন উৎস না থাকায় প্রতিক্ষণে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে জনগোষ্টীকে। অনেক দূর থেকে পানি কিনে এনে খেতে হয়। অভাবের সংসারে পানি কিনে এনে খাওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ ছাড়া অনেক দূর থেকে পানি আনতে নারীদের নানা শারীরিক সমস্যা সহ অনেক সময় নির্যাতনেরও শিকার হতে হয়।

বক্তরা আরও বলেন, স্থানীয় পুকুড় জলাশয়গুলো প্রভাবশালীরা লীজ নিয়ে তাতে রাসায়নিক কীটনাশক দিয়ে মাছ চাষ করে এবং সে সকল পুকুড় থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতেও বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। এরকম ঘটনা বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রায় গ্রামগুলোতেই কম বেশি দেখা যায়। এভাবে আর এই যুগে চলা যায় না। আমরা এই ডিজিটাল বাংলাদেশে পানি পাবো না এটা কি করে সম্ভব? আমরা পানির অধিকার চাই। বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষ আর কতদিন পিছিয়ে থাকবে? প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।

এদিন সকাল ১০ টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন হয়। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপিতে মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালী পাড়াসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের পানির অধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে দাবি জানানো হয়।

দাবিগুলো হলো- তানোর উপজেলার মুন্ডুমালার আদিবাসী মাহালী পাড়াতে দ্রুত পর্যাপ্ত ডিপ টিউবওয়েল-টিউবওয়েল-সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করে খাবার পানির সমস্যা সমাধান করে দিতে হবে।

রাজশাহী জেলা তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের পুকুর-দীঘি এবং চলমান জলাভূমি লিজ প্রথা সংশোধন করে সত্যিকারে স্থানীয় প্রান্তিক মানুষের ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে।

গ্রামের ভিতরে বা কাছাকাছি পুকুরগুলো গ্রাম বাসির নামে-কমিউনিটির নামে বিনাশর্তে লিজ দিতে হবে যাতে কমিউনিটির মানুষগুলো এটি ব্যবহার করতে পারে।

বরেন্দ্র অঞ্চলের সকল পুকুর-দীঘিগুলো সংস্কার করে দিতে হবে। যাতে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহারসহ কৃষি কাজে ব্যবহার করা যায়। অতএব, আপনার প্রতি আমাদের আবেদন যে, উক্ত দাবিগুলো পূরণে সার্বিক সহযোগিতা করবেন।

এসময় রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান, মাহালী পাড়া বাঁশ বেত উন্নয়ন সংগঠনের চিচিলিয়া হেমব্রম, বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরামের সভাপতি শাইখ তাসনিমসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর