প্রশিকার কৈট্টাস্থ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বেহাল দশা

, জাতীয়

তরিকুল ইসলাম সুমন, মানিকগঞ্জ থেকে ফিরে | 2023-09-01 18:33:45

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকার মানিকগঞ্জের কৈট্টাস্থ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বেহাল দশা। অথচ এক সময় এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি।

এদিকে কর্মচারীদের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বেতন চাইতে গেলে করা হয় নাজেহাল। তারপরও অনেকে চাকরিতে ছিলেন নতুন কিছুর আশায়। কিন্তু হঠাৎ করেই স্থায়ী ১০৫ জন এবং অস্থায়ী ৩০০ জনকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়।

সরেজমিনে প্রশিকার কৈট্টাস্থ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার করা হয় না। অভ্যর্থনা কেন্দ্র যেন ময়লার ভাগাড়। নেই কোনো আসবাবপত্র। সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে আবর্জনা। বিশাল পুকুর ও খেলার মাঠ। ফসলি জমির উপরের মাটি নেই। আগে যেখানে সব জায়গা ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এখন সেখানে পড়ে আছে শুধুই খাঁচা। বিক্রি করে দেয়া হয়েছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ।

কৈট্টাস্থ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বেহাল দশা

কৈট্টাস্থ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এখন কাজ করছেন হাতেগোনা ৫-৭ জন কর্মচারী। কর্মরত গেটম্যান ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, এখানে কাজী ফারুক অনেকদিন আসেন না। এখানকার সকল কিছু দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন শহিদুল ইসলাম (জিএম)। তিনি তার খেয়াল খুশি মতো যা ইচ্ছে তাই করছেন। এখানে যারা রয়েছেন তারাও ১০ মাস ধরে বেতন পান না।

কর্মচারীরা বলেন, জিএম যখন যা ইচ্ছে তাই করছেন। বিক্রি করে দিয়েছেন পুকুরের অনেক টাকার মাছ, এসি, মাটি, গাছ, বিদ্যুতের তার, ফ্যান, টিভি, তাঁত মেশিন, টিস্যু কালচার ল্যাবের মূল্যবান যন্ত্রপাতিও।

মূল্যবান মালামাল বিক্রি প্রসঙ্গে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জিএম শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রশিকাকে ধ্বংস করছে কাজী ফারুক আহম্মদের একটি বিরোধী চক্র। তারা নানাভাবে মিথ্যাচার করছেন। তারা এখন এটি দখল নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এজন্য আমার ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চালাচ্ছে অপপ্রচার।

কর্মচারীদের বেতন বন্ধ থাকার বিষয়ে বলেন, এখন কর্মসূচি অনেক কমে গেছে। এ কারণে বেতন দিতে সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত এর সমাধান হবে বলে আশা করেন।

কর্মচারীদের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি

প্রশিকার বর্তমান প্রধান নির্বাহী সিরাজুল ইসলাম বলেন, একটা সময় কৈট্টার এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আন্তর্জাতিক সুনাম ছিল। কিন্তু যখন থেকে এটির অবৈধ দখল নিয়েছেন কাজী ফারুক আহম্মদ ও তার সহযোগীরা, তখন থেকেই এর দুরবস্থা শুরু হয়েছে। কারণ তারা কোনো কাজতো করছেই না বরং নষ্ট করছেন। তারা এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট করেছেন। দামি দামি আসবাপত্র ও মেশিনারীজ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করেছেন। অবৈধভাবে প্রায় ৪০০ কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করে তাদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। আমরা শুনেছি প্রতিদিন তারা এখণ দুঘণ্টা করে কেন্দ্রের সামনে হাজিরা হিসেবে অবস্থান করে। অনেক সময়ে তাদের ওপর চালানো হয় সন্ত্রাসী হামলাও।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমরা মানিকগঞ্জের এসপি, ডিসি এবং সাটুরিয়া থানায় লিখিতভাবে দিয়েছি। প্রশিকার এ কেন্দ্র থেকে যাতে করে কোনো মালামাল বিক্রি করা না হয়। এবং অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ওবায়দুল্লাহ বলেন, একটা সময় কৈট্টার এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল জমজমাট। ৩-৪ শ কর্মচারী কাজ করতেন। কিন্তু ২০০৯ সালের পর থেকেই শুরু হয় ভাটা। ৩-৪শ কর্মচারীকে কোনো কিছুই না জানিয়ে চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখনও তারা প্রায় দিনই হাজিরার জন্য আসেন কেন্দ্রের সামনে। বেতনভাতা চাইতে গেলে চালানো হয় হামলা। দেয়া হচ্ছে মামলা। আমি দায়িত্ব থাকাকালে অনেক কর্মচারীকে সরকারি সহায়তা দিয়েছি। তাদের কষ্ট সহ্য করা যায় না। পেটে ভাত নাই অন্যদিকে থাকতে হচ্ছে পুলিশের ভয়ে।

বিক্রি করা হয়েছে মূল্যবান জিনিসপত্র

কৈট্টার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে চাকরিচ্যুত মিহির কাঞ্চন (হাউস কিপার), নূরুল ইসলাম (বাবুর্চি), রাশেদা বেগম, (হাউস কিপিং), মাজেদা বেগম (হাউস কিপিং), জমিলা বেগম, মো. আক্তার হোসেন (প্রশাসনিক কর্মকর্তা) জানান, কাজী ফারুক দখল নেওয়া পর থেকে এই কেন্দ্রের ওপর নানা সমস্যা তৈরি হয়। আমাদের ২৩ মাসের বেতন বকেয়া রেখে চাকরিচ্যুতি করা হয়েছে। বেতন চাইতে গেলে সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে আমাদের অনেক সদস্য আহত হয়েছিল। আমরা আমাদের চাকরি ফেরতসহ বকেয়া বেতন চাই। পাশাপাশি আমাদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহার চাই।

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, চাকরি হারিয়ে অনেকে এখন দিনমজুর ও অন্যের বাসায় কাজ করেন, কেউ চায়ের দোকান দিয়ে দিন চলাচ্ছেন। অনেকে আবার এলাকা ছেড়েও চলে গেছেন।

উল্লেখ্য, প্রশিকার বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ মনে করে, প্রশিকাকে ভঙ্গুর অবস্থা থেকে যেভাবে দেশের সকল শাখা অফিস চালু করা হয়েছে। সেভাবে প্রশিকার কৈট্টাস্থ প্রশক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করা হলে, একদিকে সম্পদ রক্ষা, অন্যদিকে চাকরিচ্যুতদের চাকরিতে পুনঃনিয়োগও সম্ভব হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর