গমের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-30 23:43:09

তুলনামূলক কম খরচে এবার গমের বাম্পার ফলন হওয়ায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে তুলনামূলক সেচ, কীটনাশক, শ্রমিক থেকে শুরু করে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় গমের আবাদে খরচ কম। এরই মধ্যে আগাম বোনা গম কাটও শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলায় গমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।

চাষিরা বলছেন, তুলনামূলক অন্য ফসল আবাদের চেয়ে গম আবাদে খরচ কম, সেচ, কীটনাশক, লেবার থেকে শুরু করে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় খরচ কম হয়, এটা লাভজনক। এবার গম চাষের অনুকূল আবহাওয়া থাকায় তেমন পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারেনি। সেজন্য বাড়তি কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। যারা গম কেটে ঘরে তুলতে শুরু করেছেন তারা বলছেন বিগত বছরের তুলনায় এ বছরে গমের ফলন অনেক ভালো হচ্ছে। এবার ১ বিঘা জমির গম মাড়াই করে ১৮ মণ গম পাচ্ছেন। বাজারে প্রতি মণ গম ১ হাজার ৭০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা করে দাম পাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এরই মধ্যে আগাম গম কাটতে শুরু করেছে কৃষকরা। এ উপজেলার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গমের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি দেখা দিয়েছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার মাঠে দেখা যায় গমের আবাদ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে সরকারিভাবে বিনামূল্যে কৃষকদের গম চাষে আরও বেশি আগ্রহী করতে কৃষি বিভাগের তত্বাবধানে এক হাজার ৭০০ কার্ডধারী কৃষকদের উন্নত জাতের বারি গম বীজ ও সার বিতরণ করা হয়। এছাড়া কিভাবে আরও গমের ফলন বাড়ানো যায় সে বিষয়ের উপজেলা উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা ইউনিয়ন মাঠ পর্যায়ে উপযুক্ত পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন কৃষকরা।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সরেজমিনে বাউসা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠের যে দিকেই চোখ যায় সোনালি পাঁকা-আধা পাকা শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। কোনো কোনো জমিতে গম এখনও কাঁচা আছে। তবে, ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে গম পেকে যাবে বলে আশা করছেন চাষিরা।

উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের কৃষক আকরাম হোসেন জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছেন। এবছর সার ও বীজের দাম বেশি হওয়ায় বিঘা প্রতি সাত থেকে আট হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি ভালো ফলনের আশায় বারি -৩৩ জাতের গমের আবাদ করেছেন। গমের বাজারমূল্য ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা দর হওয়ায় কৃষকেরা খুশি ।

উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের চর কালিদাসখালি গ্রামের কৃষক ও শিক্ষক গোলাম মোস্তফা জানান, তিনি ৭ বিঘা জমিতে গম চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গমের ফলন ভাল হয়েছে। বিঘা প্রতি ১৬ থেকে ১৭ মণ হারে ফলন পাওয়ার আশা করছেন। এদিকে গমের বাজারমূল্য ভালো হওয়ায় গম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকেরা বলে জানান তিনি।

চর কালিদাসখালি গ্রামের কৃষক আফজাল হেসেন বলেন, উঁচু জমিতে গম ভালো হয়। সেচসহ অন্যান্য খরচ কম লাগে। ৫ বিঘা জমিতে গম বুনেছি। প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না হলে এ বছর লাভবান হওয়ার আশা করছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, এবছর ৫ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে। উপজেলায় মোট ২৩ হাজার ৯৬১ মেট্রিক টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকদের বারি-৩৩, বারি-৩২, বারি-৩১ ও বারি-৩০ জাতের গম আবাদের পরামর্শ প্রদান করেছে কৃষি অফিস । উপজেলার কমবেশী সব এলাকায় গমের আবাদ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা হিসেবে কৃষকদের বিনামূল্যে সার, উন্নতজাতের বারি গম বীজ বিতরণ করা হয়।

এছাড়া সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও তদারকি করছে উপজেলা কৃষি অফিস। অন্য বছরের চেয়ে এ বছর গমের বাম্পার ফলন হবে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ভালো দাম থাকায় লাভবান হবেন কৃষকেরা ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর