‘দেশি-বিদেশি রাজনীতির কারণে গণহত্যার স্বীকৃতি মিলছে না’

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 16:08:02

দেশি-বিদেশি রাজনীতির কারণে একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাত্রে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলছে না। এছাড়া দেশের সঠিক ইতিহাস নিয়ে জনগণের মাঝে ঐকমত্য সৃষ্টি না হওয়ায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বারবার পিছিয়ে পরেছে বাংলাদেশ।

শনিবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর ঢাকা গ্যালারিতে ‘গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও মানবাধিকার প্রশ্ন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে রাজনৈতিক নেতা ও বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন। 

বৈঠকে ইতিহাসবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, গণহত্যা নিয়ে একটা রাজনীতি আছে। বিশেষ করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে। যখন এই যুদ্ধটা হয় তখন বাংলাদেশের পক্ষে কেউ ছিল না। সেই অবস্থায় লুঙ্গি পড়া কিছু মানুষ তৎকালীন বিশ্বের পঞ্চম না ষষ্ঠ সেনাবাহিনীকে হারিয়ে দিলো, এটা কিন্তু তারা গ্রহণ করতে পারেনি। না পারার কারণে সেখানে একাডেমিয়াম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক একটা ঐকমত্যে পৌঁছেছিল যে এটা নিয়ে আলোচনার কোনও দরকার নাই। আলোচনা করলে তখন আসবে কে সাহায্য করেছিল, কারা সাহায্য করেছিল- এই বিষয়গুলো চলে আসবে। অন্যদিকে আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে ৭৫ এর পর থেকে ২৫ বছর যদি ধরেন, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি তারা কখনও গণহত্যাকে সামনে আনতে চায়নি। তারা সব সময় বিজয়ের ওপর জোড় দিয়েছে। কেননা তাদের সঙ্গে আঁতাত ছিল ঘাতকদের। এখন তারা যদি গণহত্যার কথা বলে তাহলে এসব ঘাতকদের কথা চলে আসে। সুতরাং এটি হারিয়ে গেলো। অর্থাৎ দেশ-বিদেশের রাজনীতির কারণে আমাদের গণহত্যার ঘটনাটা হারিয়ে গেলো।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, গণহত্যার স্বীকৃতির কথা বলতে গেলে প্রত্যেক সরকার দায়ী৷ বর্তমান সরকার বেশি দায়ী। কারণ ইতিহাস আজ পর্যন্ত কেউ নিরেপক্ষভাবে লিখলো না। আমরা যারা রাজনীতি করি, জনগণকে এক জায়গায় আনতে পারিনি। গণহত্যা, বঙ্গবন্ধু হত্যা এখানে আমরা দ্বিমত হবো কেন? আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এখানে কেন বিভিক্ত হয়ে যাচ্ছি। আজ কেন প্রশ্ন জাগবে কতলোক মারা গিয়েছে৷ প্রথম রাতে একলক্ষ লোকে মেরে ফেলেছে। রাস্তায় শুধু লাশ আর লাশ৷ সেইখানেও যদি কথা উঠে এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, আমরা একটা বিভৎস হত্যাকাণ্ডকে চাপা দেওয়ার নানা রকম চেষ্টা দেখেছি এবং পরবর্তীতে সেটাকে জাস্টিফাই করারও চেষ্টা হয়েছে। আমরা দেখেছি আসলে কেন সে সময় কেউ কথা বলেনি৷ এর কারণটা হচ্ছে এই গণহত্যার যে ব্যাপারটি, এর সংজ্ঞা যদি দেখি, জাতিগত নির্মূল বিষয়টা তো ছিল। পাশাপাশি ওদের প্রত্যেকের পরিষ্কার কথা, হিন্দু থাকবে না৷ বাংলা ভাষা থাকবে না। গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি করতে গেলে এই জিনিসটা প্রমাণ করা প্রয়োজন। সে সময় শুধু একটা অংশকে হত্যা করা হয়েছিল একটা ধর্মীয় কারণে। রাজনৈতিক কারণ থেকেও বড় কারণ ছিল ধর্মীয় কারণ। এই জায়গাটা আমাদের নিয়ে আসা উচিত।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, ‘সেসময় যতগুলো রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে তা গণহত্যার ভিত্তিতে। এখানে গণহত্যা হয়েছে সেটা বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান, বাংলাদেশের জন্মসনদ পত্রে ছিল। সেটাকেও আমরা হারাতে চলেছি৷ কোনও পাঠ্যপুস্তকেও নেই৷'

প্রজন্ম একাত্তরের সভাপতি আসিফ মুনীর বলেন, ‘আমরা ইতিহাসকে ধারণ করি রাজনীতিকীকরনের মাধ্যমে। এইটাই বাস্তবতা, এটার মধ্যেই আমরা আছি। এখন আমরা যদি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাই। তখন সেই প্রসঙ্গটা আসবে তোমাদের ইতিহাসের কথাগুলো ঠিক নাই। তোমাদের একেক রাজনৈতিক দল একেকভাবে ইতিহাসকে বলো। সেখানে আমাদের একটা জায়গায় আসতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, গত ৫০ বছরে এটার স্বীকৃতির জায়গায় আমরা বেশিদূর আগাতে পারি নাই৷ এই শিক্ষা থেকে সামনে এটাকে কীভাবে নিয়ে যাবো সেই জায়গা থেকে চিন্তা করতে হবে।’

এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু গোলটেবিল বৈঠকে সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন।

গোল টেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান, মানবাধিকারকর্মী রোকেয়া কবীর। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর