ভালো ফলন হলেও কমছে আলুর আবাদ

, জাতীয়

আব্দুল হাকিম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-31 21:41:13

রাজশাহীতে এবার আলুর ভালো ফলন হয়েছে। যদিও গত বছরের থেকে এবার আলুর মোট আবাদের পরিমাণ কম। স্বাভাবিকভাবেই এবার সার্বিক উৎপাদনও কিছুটা কমই হবে। কিন্তু উৎপাদন চাহিদার তুলনায় স্বাভাবিকই আছে বলে মনে করছে কৃষি দফতর।

কয়েক মাসব্যাপি পরিচর্যা শেষে এখন আলু জমি থেকে ওঠাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। তেমন রোগবাইলায়ের আক্রমণ না থাকায় ফলনও ভালো।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহীতে এবার ৩৬ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। যা গত বছর ছিলো ৩৮ হাজার ৫৪৩ হেক্টর। এবার সম্ভাব্য উৎপাদনের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৫১ হাজার ৯৯০ মেট্রিক টন। যা গত বছর ছিল ১০ লাখ ২০ হাজার ২৩১ মেট্রিক টন।

চাষীরা বলছেন, আলু এখন আর লাভজনক ফসল নেই। টানা তিন মাসের অধিক সময় ধরে খরচ ও শ্রম দিয়ে আলু আবাদ করতে হয়। আলু আবাদে প্রচুর পরিমাণ সার-কিটনাশক লাগে। এবার সার ও কিটনাশক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে সার কিনতে হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেশি। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু আলুর দাম বাজারে সবচেয়ে কম। বর্তমানে আলুর যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে উৎপাদন খরচই উঠছে না।

তানোর উপজেলার আলু চাষি লুৎফর রহমান বলেন, প্রতিবছর ৯০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করি। গত মৌসুমে আগাম বিক্রির জন্য লোকসান হয়েছিল। লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে এবারও ৭৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। আলু তোলা শুরু হয়েছে। সবকিছুর বাড়তি দাম। প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে (এখানে অন্যের জমি লিজ নেয়া ও শ্রমিক দ্বারা কাজ করায় আলু চাষ করতে খরচ বেশি হয়েছে)। কিন্তু বর্তমানে যে বাজার দর তাতে লোকসান হবে বিঘায় ১৪-১৫ হাজার টাকা করে। এখন না চাইলেও কিছু আলু বিক্রি করতেই হবে। তাছাড়া পাওনাদারের ঋণ শোধ করতে পারবো না।

মোহনপুর উপজেলার কালিগঞ্জ গ্রামের কৃষক কামরুল ইসলাম জানান, তিনি এবার প্রায় ১১০ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে আলুর চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে আলুচাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা থেকে ৩৭ হাজার টাকা। খরচ অনুসারে প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ে প্রায় ১৮ টাকা। অথচ বাজারে আলু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৪ টাকা থেকে ১৫ টাকা কেজি। হিমাগারে রেখে পরবর্তীতে বাজারজাত করলে ভাল দাম পেয়ে লাভবান হওয়ার প্রত্যাশায় আছেন। কিন্তু দাম না বাড়লে বিপদে পড়বেন।

চান্দুড়িয়া ইউনিয়নের গাগরন্দ গ্রামের কৃষক গোলাম রাব্বানী বলেন, গত বছর আলু চাষ করে ৩ লাখ টাকার লোকসানে ছিলেন। এবারও বাজারে যে দাম তাতে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হবে। তবে আলুর ফলন ভালো আছে। এটাতেই কিছুটা স্বস্তি আছে। এখন কিছু আলু কোল্ড স্টোরে রাখবো। দেখা যাক কি হয়!

রাজশাহীর আলু চাষীদের অভিযোগ, আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে হিমাগার মালিক সমিতি। তারা ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করে। তাদের সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত। প্রতিদিন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। অথচ আলুর দাম নাই। একমাস আগে আলুর বাজার ছিল ১৮-১৯ টাকা কেজি। সেই বাজার কমে ১১-১২ টাকা কেজিতে নেমেছে। দেখা যাবে, কম দামে এই হিমাগারগুলো আলু কিনে নিয়ে, একটা সময় পর অতিরিক্ত দাম বাড়িয়ে দিবে।

এ বিষয়ে মোহনপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোস্তাকিমা খাতুন জানান, চলতি মৌসুমে আলু চাষে ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজার মূল্য কিছুটা কম থাকলেও আলু হিমাগারে অথবা বালিতে সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে বাজারজাত করা হলে কৃষকরা বেশি লাভবান হবে।

এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন জানান, রাজশাহীতে আলুর যে চাহিদা তার চেয়ে অনেক বেশি আলু উৎপাদন হয়। আলু চাষে কৃষি বিভাগ নিরুৎসাহিত করছে। কারণ এখানে সার বেশি লাগে। আর এটা এখন আর তেমন লাভজনকও নেই। কৃষকদের লাভজনক সবজি উৎপাদনে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এছাড়া কৃষি বিভাগ তো মূল্য নির্ধারণ করে না। আলুর ন্যায্য দাম পাচ্ছে না, এবিষয়ে কিছু করার নেই। এখন কৃষকদের লাভজনক অন্য সবজি আবাদ করতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর