‘শুভসন্ধ্যা বীচ’ দেবে যাওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন

ঢাকা, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-01-03 20:21:59

বরগুনা থেকে ফিরে: বিদ্যুতের প্রভূত উন্নতি হলেও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ব্যর্থতা সরকারকে কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে। একমাত্র দৃশ্যমান অগ্রগতি থাকা বরিশাল পাওয়ার কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি মহল নানামুখী অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।

প্রথম দিকে পরিবেশ ও সুন্দরবন ধ্বংসের ধুয়া তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা চেষ্টা করে। এরপর কিছু ভাসমান লোকদের দিয়ে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের চেষ্টা করে। ভাসমান লোকেদের উসকে দেওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর এবার নতুন অভিযোগ তোলা হয়েছে; বালু উত্তোলনের কারণে না-কি ‘‍শুভসন্ধ্যা সী বিচ’ দেবে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন সকলেই বিষয়টিকে ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতামতের ভিত্তিতেই বীচ থেকে ১.৭ কিলোমিটার দূরত্বে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানটি মতামত দিয়েছে, জোয়ার ও ভাটার সময়ে যেখানে পানি থাকে, সেই দুই পয়েন্টের মাঝামাঝি থেকে ১ কিলোমিটার দূরত্বে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করলে বীচ থাকবে ঝুঁকিমুক্ত। বিষয়টিকে আরও নিরাপদ করতে তীর থেকে ১.৭ কিলোমিটার দূরত্বে ড্রেজার স্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বরিশাল পাওয়ার কোম্পানি।

এদিকে যখন থেকে বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে, একটি মহল তাদেরকে ঠেকানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এমনকি স্থানীয় প্রশাসনকেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়। তবে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়, কিন্তু এখনও তাদের অপতৎপরতা বন্ধ হয়নি। লোকজন গেলেই শুভ সন্ধ্যা বীচ দেবে গেছে বলে প্রচার করা চেষ্টা করছে মহলটি।

অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে ১.৭ কিলোমিটার দূরে ড্রেজার ব্যবহার করলে তীর দেবে যেতে পারে, এটা অসম্ভব ব্যাপার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, আপনি যদি কাউকে বলেন, আমার মাথা ব্যাথা করছে সঙ্গে সঙ্গে সে প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিবে। অর্থাৎ আমরা কিছু না জেনেই সব কিছুতে বিশেষজ্ঞ সাজার চেষ্টা করি, এটা খুবই ভয়ঙ্কর হতে পারে। কিছু না জেনে অনেকে সমুদ্র বিশেষজ্ঞের মতো কথা বলছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, বীচ দেবে যাওয়ার অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। যেখান থেকে বালু তোলা হচ্ছে সেই জায়গাটি উজানে পায়রাসহ বেশ কয়েকটি নদীর মোহনা। এখানে যে পরিমাণ পলি বহন করে যত বালু তোলেন কোনো সমস্যা নেই। জোয়ারের সময় ভরাট হয়ে যাবে।

তীর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হলে ঝুঁকি আছে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, টেকনিক্যালি এতে সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে আধা কিলোমিটারের মধ্যে হলে কিছুটা ভাঙন হতে পারে।

মহলটির অপপ্রচারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, কোম্পানিটি  কাজ ও ভাবনা আমার পছন্দ হয়েছে। আমার মনে হয়েছে তারা অনেক মানবিক। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে আশ্রিতদের নিজেদের থেকে পুর্নবাসনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি আমার কাছে খুবই চমৎকার লেগেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে এই অঞ্চলের চেহারা বদলে যাবে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেলের চেয়ে অনেক বেশি সাশ্রয়ী কয়লা। এমনকি আমদানিকৃত এলএনজির চেয়েও কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ কম। তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিটে খরচ পড়ে ১৫ টাকার মতো। অন্যদিকে কয়লায় ৫ থেকে ৭ টাকার মতো। অর্থাৎ দেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতির জন্য কয়লার বিকল্প নেই। যে কারণে সরকার কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে জোর দিয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুতের চাহিদা হবে ৪০ হাজার মেগাওয়ার্ট। যার মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়ার্ট কয়লা দিয়ে উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

সে মোতাবেক কাজও শুরু করে। ওরিয়ন গ্রুপকে ৬টি এবং এস আলম গ্রুপকে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয় বিগত সংসদের মেয়াদে। যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এতোদিনে উৎপাদনে যাওয়ার কথা। কিন্তু বেসরকারি এই কোম্পানি দু’টি এখনও কাজেই  শুরু করতে পারেনি। এস আলমের কিছুটা অগ্রগতি থাকলেও ওরিয়ন পুরোই অন্ধকারে।

অন্যদিক চলতি মেয়াদের শেষ দিকে ২০১৮ সালের এপ্রিল আইসোটেক গ্রুপকে বরগুনার তালতলীতে একটি ৩০৭ মেগাওয়ার্ট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয় সরকার। কোম্পানিটি এরই মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ শেষ করে ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। মেশিন আমদানির কাজও অনেকদূর এগিয়ে  নিয়েছে।

বেসরকারি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দৃশ্যমান অগ্রগতি বলতে এটাকেই বিবেচনা করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু সেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও নানা রকম নেগেটিভ প্রচারণার শিকার হচ্ছে। একটি মহল তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে আইসোটেক গ্রুপের ইডি শরীফ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা বলতে চাই পরিবেশ ও স্থানীয়দের কোন রকম ক্ষতিহয় এমন কাজ করবে না আইসোটেক। কাউকে কারো দ্বারা প্ররোচিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ। কারো কোনো বিষয়ে আপত্তি থাকলে প্রথমে আমাদের অভিযোগ কেন্দ্রে জানানোর অনুরোধ। যাতে আমরা তাদের সেই সমস্যা সমাধান করতে পারি। কিন্তু অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি আমাদের কাছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর