দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নারীদের কুমড়ার বড়ি তৈরির ধুম

খুলনা, জাতীয়

এসএম শহীদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪ | 2023-09-01 07:53:36

শীতের আগমনে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্রামীণ নারীদের মধ্যে কুমড়ার বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। কুমড়ার বড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কুমড়ার বড়ি তৈরির উপযুক্ত সময় শীতকাল। শীতের সময় গ্রামীণ নারীদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। এর মধ্যেই সকল কাজের আগে সকাল বেলা কুমড়ার বড়ি তৈরি করছে নারীরা। কুমড়ার বড়ির তরকারি একটি মুখরোচক উপাদান। এতে তরকারির স্বাদে যোগ হয় নতুনমাত্রা।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শত শত নারী কুমড়ার বড়ি তৈরির কাজে জড়িত রয়েছে। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে কুমড়ার বড়ি তৈরির ব্যস্ততা বেড়েছে গ্রাম অঞ্চলের নারীদের মাঝে। বর্ষাকাল বাদে বাকি মাসগুলোতে কমবেশি কুমড়ার বড়ি তৈরি করা হয়। আশ্বিন মাস থেকে ফাল্গুন এই ৬ মাস কুমড়ার বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। শীতকাল কুমড়ার বড়ি তৈরির ভরা মৌসুম। এ সময় গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে কমবেশি কুমড়ার বড়ি তৈরি করা হয়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। শীতের সময় কুমড়ার বড়ির চাহিদা থাকে বেশি, আর গ্রাম অঞ্চলের নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়ার বড়ি তৈরি করছে।

কুমড়ার বড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ মাষকলাইয়ের ডাল আর চালকুমড়া। এর সঙ্গে সামান্য মসলা। বাজারে প্রতি কেজি মাষকলাই ৮০ টাকা আর চাল কুমড়া ১২ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাইজ হিসাবে চালকুমড়া ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে ক্রয় করা যায়। ৫ কেজি চালকুমড়ার সঙ্গে ২ কেজি মাষকলাইয়ের মিশ্রণে কুমড়ার বড়ি ভালো হয়। প্রথমে মাষকলাই রোদে শুকিয়ে যাতায় ভেঙে পরিষ্কার করে বা না ভেঙে পানিতে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হয়। প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা মাষকলাই পানিতে ভেজাতে হয়।

তারপর ঢেঁকি বা শিলপাটায় কুমড়ার বড়ির পেস্ট তৈরি করা হয়। তবে এখন বিভিন্ন এলাকায় কুমড়ার বড়ি তৈরির মেশিন স্থাপনের পর থেকে সবাই তা দিয়ে মাষকলাই ও কুমড়ার পেস্ট তৈরি করছে। এরপর দুইটির মিশ্রণে কুমড়ার বড়ির উপকরণ তৈরি করা হয়।

মাঠ, বাড়ির আঙিনা, ছাদ বা খোলা জায়গায় ভোর থেকে বড়ি বসানো শুরু করা হয়। পাতলা কাপড়ে সারি সারি বড়ি বসানো হয়। কুমড়ার বড়ি বসানোর পর দুই-তিন দিন একটানা রোদে শুকানো হয়। সূর্যের আলো কম হলে ৩-৪ দিন পর্যন্ত শুকাতে সময় লেগে যায়। শুকানোর পর কাপড় থেকে বড়ি উঠিয়ে পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের গৃহবধূ নুসরত সাবিহা জানান, ৫ কেজি কুমড়ার সঙ্গে দুই কেজি মাষকলাইয়ের মিশ্রণে কুমড়ার বড়ি তৈরি ভালো হয়। আগে মাষকলাই পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করা, আর ঢেঁকিতে বা পাটায় বেটে বড়ি তৈরি করতে প্রচুর পরিশ্রম হত, সেই সঙ্গে অনেক সময় লাগত। এখন খোসা ছাড়ানো মাষকলাই বাজারে ক্রয় করতে পাওয়া যায়। এখন মাষকলাই পানিতে ভিজিয়ে মেশিনের সাহায্যে মাড়াই করে অল্প সময়ে বড়ির মিশ্রণ তৈরি করা খুব সহজ হয়েছে।

এতে করে অল্প সময়ে প্রচুর পরিমাণে কুমড়ার বড়ি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। এক কেজি কুমড়ার বড়ি তৈরি করতে প্রায় ১২০ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। আর বাজারে ২শ থেকে আড়াইশ টাকা দরে কুমড়ার বড়ি বিক্রি হচ্ছে। এতে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয় করা সম্ভব হচ্ছে বলেও জানান নুসরত সাবিহা।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, শীত মৌসুমে গ্রামের নারীরা কুমড়ার বড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় করছে। গ্রামীণ নারীরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর