৫ বছরে লিটনের সম্পদ বেড়েছে চারগুণ, পিছিয়ে নেই সহধর্মিণী

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-31 22:10:27

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে চার মেয়র প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে সম্পদ বেশি সদ্য সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের। গত পাঁচ বছরে লিটনের বার্ষিক আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৮০ গুণ। তবে পিছিয়ে নেই তার সহধর্মিণী শাহীন আকতার রেনীও। তারও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় আড়াইগুণ। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া তাদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

হলফনামা অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে সদ্য সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় আড়াইগুণ। আর বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় চারগুণ। বেড়েছে অস্থাবর সম্পদও। পিছিয়ে থাকেননি তার স্ত্রী শাহীন আকতার রেনীও। তারও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় আড়াইগুণ। পাঁচ বছর আগে শাহীন আকতার রেনীর কোনো স্থাবর সম্পদ না থাকলেও তিনি এখন দোতলা বাড়ি, জমি এবং মৎস্য খামারের মালিক।

পাঁচ বছর আগে নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ৭৮ লাখ ৩২ হাজার ২০৮ টাকা। পাঁচ বছর পর এখন তার বার্ষিক আয় ২ কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। তিনি মৎস্য চাষ থেকে বছরে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা, কৃষিখাত থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং মেয়র হিসেবে ১৬ লাখ ১০ হাজার টাকা সম্মানী আয় দেখিয়েছেন। ২০১৮ সালে মৎস্য চাষ থেকে তার ২০ লাখ, ব্যবসা থেকে ১২ লাখ, কৃষিখাত থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার, বাড়ি ভাড়া থেকে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৫০০, শেয়ার থেকে ২০ লাখ ১০ হাজার এবং অন্যান্য খাত থেকে ১৯ লাখ ৯ হাজার ৭০৮ টাকা আয় ছিলো। ২০১৮ সালের তুলনায় এখন লিটনের বার্ষিক আয় ৩ দশমিক ৮০ গুণ বেশি।

২০১৮ সালে লিটনের অস্থাবর সম্পদ ছিল ১ কোটি ৭৫ লাখ ১৩ হাজার ৫০৮ টাকার। এরমধ্যে নগদ ৩০ হাজার টাকা, ব্যাংকে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৮ টাকা এবং ৩৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার একটি জিপগাড়ি ছিল। এছাড়া উপহার হিসেবে পাওয়া ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল। এখন অস্থাবর সম্পদ ৪ কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৮৯৯ টাকা। এরমধ্যে হাতে নগদ ৭ লাখ ২ হাজার ২৩৭ টাকা, ব্যাংকে ২ কোটি ৮৪ লাখ ৯১ হাজার ৮০০ টাকা, ৪০ লাখ ৮৫ হাজার টাকার শেয়ার, ৪৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার জিপ ও প্রাইভেটকার, ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ২৫ লাখ টাকার ইলেট্রনিক্স সামগ্রী এবং ৬ লাখ টাকা দামের একটি শটগান ও একটি পিস্তল রয়েছে। তার অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে ২ দশমিক ৩৮ গুণ।

এখন স্থাবর সম্পদ হিসেবে লিটনের আছে ৪ দশমিক ৬৩ একর কৃষিজমি, নগরীর উপশহরে একটি তিনতলা বাড়ি, ঢাকার বনানীতে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট এবং ৭০ লাখ ১২ হাজার ১৯০ টাকার মৎস্য খামার। ২০১৮ সালে লিটনের কৃষিজমি ছিল ১ দশমিক ৬৩ একর। এখনকার মতো তখনও রাজশাহীতে তিনতলা বাড়ি ও ঢাকায় দুটি এপার্টমেন্ট ছিল। পাঁচ বছরে ৩ একর জমি ও মৎস্য খামার হয়েছে লিটনের। ২০১৮ সালে লিটনের কোন ঋণ ছিল না। এখন অবশ্য গাড়ি কিনতে গিয়ে পূবালী ব্যাংকে ২০ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭ টাকা ঋণ হয়েছে তার। লিটন তার পেশা হিসেবে আইনজীবী লিখলেও এ খাত থেকে তার কোনো আয় নেই। তার নামে বর্তমানে কোনো মামলা চলমান নেই। ১৯৯৬ সালে দুটি মামলা হলেও প্রত্যাহার হয়েছে।

খায়রুজ্জামান লিটন ২০১৮ সালে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন। আগামী ২১ জুনের নির্বাচনে অংশ নিতে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। এর আগে ২০১৩ সালে মেয়রপ্রার্থী হয়ে লিটন পরাজিত হয়েছিলেন। তার আগে ২০০৮ সালে দলের সমর্থনে নির্বাচন করে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।

এদিকে সম্পদ বেড়েছে লিটনের স্ত্রীরও। লিটনের নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী, ২০১৮ সালে তার স্ত্রী শাহীন আকতার রেনীর বার্ষিক কোন আয় ছিল না। তবে এখন তিনি ব্যবসা করে বছরে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ও মৎস্য খাত থেকে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা আয় করেন। আয়-রোজগার শুরু হওয়ায় তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদও বেড়েছে। ২০১৮ সালে তার কোন স্থাবর সম্পদ ছিল না। তবে এখন কৃষিজমি আছে ১ দশমিক ৭৭ একর, মাছের খামার হয়েছে ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকার। নতুন করে নগরীর উপশহরে একটি পুরাতন দোতলা বাড়িও কেনা হয়েছে তার নামে।

২০১৮ সালে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে শাহীন আকতার রেনীর উপহার হিসেবে পাওয়া ৫০ স্বর্ণালঙ্কার ছিল। এছাড়া ৯২ লাখ ৩ হাজার টাকা মূল্যের অন্য সম্পদ ছিল। এরমধ্যে নগদ ২০ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৫৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকা এবং ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার স্থায়ী আমানত ছিল। পাঁচ বছরে তার স্বর্ণ বাড়েনি। স্বর্ণ বাদে অন্য অস্থাবর সম্পদের মূল্য বেড়ে ২ কোটি ৮৪ হাজার টাকা হয়েছে। এরমধ্যে নগদ ১৮ লাখ ৪৭ হাজার ১৩০ টাকা, ব্যাংকে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৭৬ হাজার ৮৭০ টাকা, ১০ লাখ টাকার শেয়ার, ৯ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত, আড়াই লাখ টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী এবং ২ লাখ ১০ হাজার টাকার আসবাবপত্র হয়েছে তার নামে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর