দেশে দুধের ঘাটতি ৮৯২১ মেট্রিক টন

, জাতীয়

তরিকুল ইসলাম সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 10:32:32

পুষ্টিমান ও পুষ্টিহীনতা রোধে দুধই শ্রেষ্ঠ। কিন্তু সরকারের নানা উদ্যোগে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি হলেও বিশাল ঘাটতি রয়েছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে মাথাপিছু দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১৯৩.৩৮ মিলিলিটার। ঘাটতি থাকছে ৫৪ গ্রাম। দেশের বর্তমান জনসংখ্যা হিসেবে (১ কোটি ৫২ লাখ) এ ঘাটতি ৮ হাজার ৯২১ মেট্রিক টনে এসে পৌছেছে।

পুষ্টিবিদদের মতে, সর্বোচ্চ পুষ্টিমানের জন্যই দুধের শ্রেষ্ঠত। দুধের অপরিহার্য উপাদান ল্যাকটোজ, যা দৈহিক গঠন, বিকাশ ও মেধা বৃদ্ধিতে সহায়ক। মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার মূল উপাদান দুধ। বাংলাদেশের জনগণের একটি বৃহৎ অংশ তরল দুধ পান থেকে বঞ্চিত। গরুর দুধে আছে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ পদার্থ যেমন ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রণ, কোবাল্ট, কপার, জিংক, আয়োডিন ও সেলিনিয়াম। গরুর দুধের কম্পজিশনে পানি ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ল্যাকটোজ ৪ দশমিক ৮ শতাংশ, ফ্যাট ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, প্রোটিন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দুধের মূল উৎস গরু। ৯০ শতাংশ দুধ আসে গরু থেকে, আট শতাংশ আসে ছাগল থেকে এবং দুই শতাংশ আসে মহিষ থেকে। ১৯৮৯-৯০ থেকে ২০০১-০২ অর্থবছর পর্যন্ত দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির হার ২.৪ শতাংশ, ২০০৯-১০ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির হার ১৬.৪৪ শতাংশ। বর্তমানে মাথাপিছু দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১৯৩.৩৮ মিলিলিটার।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি না করে পারকেপিটা উৎপাদন বৃদ্ধির চিন্তা করতে হবে। এজন্য জাত উন্নয়নের বিকল্প নেই। দেশি গরু থেকে দুধের উৎপাদন ৫-৭ কেজি হলেও উন্নত জাতের একটি গরু ২০- ৪০ কেজি পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে। উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহ করে ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে জাত উন্নত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জাত উন্নয়নের মাধ্যমে মহিষের দুধের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এজন্য ভারতীয় গীর বা অন্যকোনো জাত এনে সিলেকটিভ ব্রিডিংয়ের দিকে যেতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। খামারিদের আধুনিক শেড, সাইলেজ করা, ভ্যাকসিন দেওয়াসহ নানান পরামর্শ দিতে হবে। সর্বোপরি উৎপাদিত দুধ যাতে খামারিরা নিশ্চিন্তে বিক্রি করতে পারে সরকারকে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবেই আমাদের দুধের ঘাটতি পূরণ হবে।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। বরাবরের মতোই এ বছরও এ দিনকে কেন্দ্র করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়াধীন প্রাণিসম্পদ অধিদফতর দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন (কওই) অডিটোরিয়ামে ‘বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন’ ও ‘ডেইরি আইকন সেলিব্রেশন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)’ এ আয়োজনে সহযোগিতা প্রদান করছে।

ঢাকার বাইরেও এলডিডিপি প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৬১টি জেলায় বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ২০২৩ উপলক্ষে নেওয়া হয় নানামুখী কর্মসূচি। বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়/এতিমখানার শিশুদের দুধ খাওয়ানো, কুইজ কম্পিটিশন, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, র‌্যালি ও সভা আয়োজন এবং পুরস্কার বিতরণ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চারটি ক্যাটাগরিতে দেশের দুগ্ধ খাতের ৪১ জন সফল খামারি ও উদ্যোক্তাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। দেশে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত এ পুরস্কারের খাতভিত্তিক নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হলো- ডেইরি খামার ক্যাটাগরিতে ২০টি, পশুখাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্যাটাগরিতে ৮টি, দুধ/মাংস প্রক্রিয়াকরণ ক্যাটাগরিতে ৯টি এবং খামার যান্ত্রিকীকরণ ক্যাটাগরিতে ৪টি। প্রতিটি পুরষ্কারের মূল্যমান এক লক্ষ টাকা। সেই সাথে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে ক্রেস্ট ও সনদ। এর আগের বছর ২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৪টি ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত ৩৯টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদারের সভাপতিত্বে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নির্বাচিত ডেইরি আইকনদের হাতে পুরস্কার তুলে দিবেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এমপি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর