৭ বছরেও পূর্ণতা পায়নি খুলনার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ

খুলনা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 10:39:54

অর্থাভাবে সাত বছরেও পূর্ণতা পায়নি খুলনার গল্লামারী বধ্যভূমির স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধ। অরক্ষিত অবস্থায় থাকা এ বধ্যভূমি এখন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

দুই কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্মৃতিসৌধটি ২০১১ সালে উদ্বোধন করা হলেও মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে প্রায় আরও ৯ কোটি টাকা প্রয়োজন। স্থানীয় সরকার বা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ না দেয়ায় থমকে আছে নির্মাণকাজ। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ খুলনার মুক্তিযোদ্ধারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধে মৃত ব্যক্তিদের স্মরণে গল্লামারী বধ্যভূমির তিন একর জমিতে ২০০৮ সালে পূর্ণাঙ্গ স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল খুলনা জেলা পরিষদ। তখন এ নির্মাণে মন্ত্রণালয় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। তার সঙ্গে আরও ১৬ লাখ টাকা যোগ করে জেলা পরিষদ। দুই কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ের পরে নির্মিত স্মৃতিসৌধটি উদ্বোধন করা হয় ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। এরপর আর অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ায় স্মৃতিসৌধটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি।

খুলনা জেলা পরিষদের উদ্যোগে সৌধটি নির্মাণে মোট প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ছিল মূল স্তম্ভ, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ, স্তম্ভের চারপাশে ১০ ফুট লাল টাইলস্ বসানো, পায়ে হাঁটা পথ, পার্কিং ইয়ার্ড, সীমানা প্রাচীর, গেট, সিকিউরিটি শেড, রেস্টুরেন্ট, দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান, পানির ফোয়ারা। যার অধিকাংশ কাজই এখনো বাকি।

খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘স্মৃতিসৌধের পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে এখনো ৯ কোটি টাকা প্রয়োজন। অর্থ বরাদ্দ চেয়ে একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো সাড়া মেলেনি। অর্থ পেলেই সব কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।’

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ খুলনা মহানগর ইউনিট কমান্ডার অধ্যাপক আলমগীর কবীর বলেন, ‘গল্লামারী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে সাধারণ মানুষ যে রাস্তাটি ব্যবহার করে সেটি এখনো কাঁচা। এছাড়া স্মৃতিসৌধের আশপাশে গরু-ছাগল চরে বেড়ায়। রাতে মাদক সেবীদের আড্ডা বসে।’

স্মৃতিসৌধের সম্মান ও আবেদন রক্ষায় এর পূর্ণাঙ্গ রূপের দাবি জানান তিনি।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে বর্তমান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ছিল পূর্ব পাকিস্তান রেডিও স্টেশন। সেখানে আস্তানা ছিল পাকিস্তানি সেনাদের। যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিকামী ও সাধারণ মানুষদের গল্লামারী এলাকায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হতো। হত্যারপরে গল্লামারীর নদী ও আশপাশের জলাভূমিতে তাদের মরদেহ ফেলা হতো। নয় মাসে ওই এলাকা পরিণত হয় মরদেহের স্তূপে। যুদ্ধের পর গল্লামারী এলাকা থেকে ৫ ট্রাক মানুষের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছিল। তবে ঠিক কতজনকে সেখানে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনো কেউ জানাতে পারেননি। যে কারণে এ স্থানটিকে বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধের জন্য বেছে নেয়া হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর