চট্টগ্রামের চকবাজারের চাঞ্চল্যকর আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পিকে হত্যার ঘটনায় এক নারীসহ দুজনের মৃত্যুদণ্ড ও তিন জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডিতদের ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় একজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৬ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ বিচারক মো. জসিম উদ্দীনের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী নেছার আহমেদ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজন হলেন কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার উত্তর লক্ষ্যারচর এলাকার মন্ডল পাড়ার জাকির হোসেনের মেয়ে রাশেদা বেগম (২৮) ও পটিয়া থানার শোভনদন্ডী এলাকার হারুনুর রশিদের ছেলে হুমায়ুন রশিদ (২৮)।
যাবজ্জীবন দণ্ডিতরা হলেন বরগুনা জেলার তালতলী থানার সোনাকাটা ইউনিয়নের লাউপাড়া আকন্দ বাড়ির মনসুর আলীর ছেলে আল আমিন (২৮), নোয়াখালী জেলার সাধুরাম থানার ব্রহ্মপুর এলাকার আন্দার বাড়ির মৃত হাবিবুল্লাহ’র ছেলে আকবর হোসেন রুবেল প্রকাশ সাদ্দাম (২৩) ও খাগড়াছড়ি জেলার সদর থানার শালবন এলাকার ফিরোজ সরকার বাড়ির হাফিজুল ইসলামের ছেলে মো.পারভেজ আলী (২৪)। এই মামলায় খালাস পেয়েছেন জাকির হোসেন প্রকাশ মোল্লা জাকির।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানে আলীকদমের চৌমুহনী এলাকার ওমর ফারুক বাপ্পি আইন পেশায় যুক্ত হন ২০১৩ সালে। ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর রাতে চকবাজার থানার কে বি আমান আলী সড়কের একটি ভবনের নিচতলা থেকে বাপ্পির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় তার হাত ও মুখ স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো, পা লাল ফিতা দিয়ে বাঁধা ও গোপনাঙ্গ কাটা ছিল। এই ঘটনায় নিহতের বাবা আলী আহমেদ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার দুদিন পর চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এই মামলায় ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল আদালতে অভিযোগত্র দাখিল করে পুলিশ। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, স্বামীর মামলার সুবাদে দেলোয়ার নামের এক ইয়াবা পাচারকারী স্ত্রী রাশেদা বেগমের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় বাপ্পির। এক পর্যায়ে তারা দুই লাখ টাকা দেনমোহরে গোপনে বিয়ে করেন। ঘটনার দুদিন আগেই স্বামী-স্ত্রী থাকবেন জানিয়ে কে বি আমান আলী সড়কের ওই বাসা ভাড়া নেন রাশেদা। কাবিনে দেনমোহর অল্প হওয়ায় স্ত্রীকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন বাপ্পি। তাই দেনমোহর বাড়িয়ে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা করার পরিকল্পনা করেন রাশেদা। সেজন্য হুমায়ুন নামের এক বন্ধুর মাধ্যমে ৪ যুবককে ভাড়া করেন তিনি। পরিকল্পনানুযায়ী খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর না দেওয়ায় আসামিদের সহযোগিতায় বাপ্পিকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন রাশেদা।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী নেছার আহমেদ বলেন, আইনজীবী হত্যার ঘটনায় পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর আসামিদের বিচার শুরু হয়। এ মামলায় মোট ৩২ জন সাক্ষী ছিলেন। আদালত ২৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। আদালত সাক্ষী ও প্রমাণের ভিত্তিতে দুজনের মৃত্যুদণ্ড, তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং একজন আসামিকে খালাস দিয়েছেন।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হুমায়ুন রশিদ ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মো.পারভেজ আলী এবং খালাস পাওয়া জাকির মোল্লা উপস্থিত ছিলেন। পরে হুমায়ুন রশিদ ও মো.পারভেজ আলীকে সাজা পরোয়ানা মূলে কারাগারে পাঠানো হয়েছে জানান তিনি।