ব্যবসা বাণিজ্য ছাড়া কোনো দেশ উন্নতি করতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 14:47:51

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ব্যবসা বাণিজ্য ছাড়া কোনো দেশ উন্নতি করতে পারে না। আর সব কাজ সরকার একা করবে না, একা করতে পারে না। হ্যাঁ সরকারের হাতে কিছু থাকবে সেটা হচ্ছে অর্থনৈতিক অবস্থাটাকে যাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং একটা সুস্থ পরিবেশ রাখতে পারে। কিন্তু মূল ব্যবসটা করবে বেসরকারি খাত। তাই যখনি আমরা সরকারে এসেছি বেসরকারি খাতের জন্য কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমরা ব্যবসা করতে আসিনি কিন্তু ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসা করাবার মত পরিবেশ করে দেয়া এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’

বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ব্যবসায়ী সম্মেলেন ২০১৮: শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সম্মেলনটি আয়োজন করে। সম্মেলনে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের গুরুত্ব তুলে ধরে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই উপমহাদেশে যতগুলো প্রবীণ রাজনৈতিক দল আছে তার মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটা। আমরা যে নির্বাচনী ইশতেহারটি দিয়েছি, আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার কিন্তু একবার ঘোষণা দিয়ে ফেলে দেই না। এই ইশতেহারটা আমাদের সঙ্গে থাকে। এমনকি ছোট করে কপি করে আমরা ব্যগেও রাখি, কেউ পকেটেও রাখি। আর সেই সঙ্গে সঙ্গে আমরা যখনি কোনো প্রজেক্ট নেই, কিংবা যখনি বাজেট করি, ওই সময় আমরা প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের একটা কপি দিয়ে দেই। কারণ আমরা যে ওয়াদা দিয়েছি সেই ওয়াদা পূরণ করতে চাই। শুধু পূরণ করা নয় যদি সুযোগ হয় তার থেকে বেশিও করি। যেমন ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম সেখানে দেখবেন লেখা আছে আমরা ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করব, আমরা কিন্তু ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি।’

দেশের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমি একটা কথাই বলতে চাই যে, আমরা কিন্তু নিজেরা কখনো ব্যবসা করি না, ব্যবসা বুঝি না ব্যবসা জানি না কিন্তু আমি এটা বিশ্বাস করি আমাদের যে সংবিধান জাতির পিতা দিয়েছিলেন স্বাধীনতার মাত্র নয়মাসের মধ্যে, সে সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদে যে অর্থনীতির নীতি মালা দেন সেখানে তিনি সরকারি খাত, বেসরকারি খাত, কোঅপারেটিভ তিনটাকেই তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। অর্থাৎ বেসরকারি খাত এদেশে যে বিকশিত হবে সেটাও কিন্তু সংবিধানে তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন। কাজেই আমরা সে নীতিমালার ভিত্তিতেই আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা গ্রহণ করি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংগঠন হিসেবে আমাদের নিজস্ব একটি অর্থনৈতিক নীতিমালা আমরা প্রণয়ন করেছিলাম। তারই ভিত্তিতে আমাদের লক্ষ্য ছিল যে আমরা সরকার গঠন করে কীভাবে দেশ চালাব, কীভাবে কী করব। সেদিকে লক্ষ্য করলে আপনারা দেখবেন যে প্রথম থেকেই একটা ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা, বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেয়া এবং বেসরকারি খাতকে ব্যবসা বাণিজ্য করে দেয়ার একটা সুযোগ সৃষ্টি করা কিন্তু আমরা শুরু করেছিলাম।

তিনি আরও বলেন, অনেকগুলো সেক্টর ছিল যেমন আপনি বিদ্যুৎ ধরেন, এই বিদ্যুৎ কিন্তু কখনো বেসরকারি খাত ছিল না। বিদ্যুৎ শুধুমাত্র সরকারি খাত থেকে উৎপাদন হত। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমি আইন করে এটা বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিই। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের যারা শিল্প মালিক তাদেরকেও আমরা অনুমোদন দিয়ে দিই যে ১০/২০/৩০ মেগাওয়াট যাই পারে তারা কিন্তু ক্যাপটিভ জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নিজের ফ্যাক্টরিতে ব্যবহার করবে বিক্রিও করতে পারবে সে সুযোগটাও আমরা করে দিয়েছিলাম। জেনারেটরের ওপর থেকে সমস্ত ট্যাক্স আমি তুলে দিয়েছিলাম। ঠিক এভাবে সমস্ত সেক্টর আজকে ব্যাংক, বীমা, টেলি কমিউনিকেশন, মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে সমস্ত সেক্টরগুলি কিন্তু আমরা উন্মুক্ত করে দিই বেসরকারি খাতে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কখনো বিদেশ সফরে যাই তখন সঙ্গে করে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি নিয়ে যাই। নিয়ে যাই এই কারণে যে, আমি সবসময় বলি আপনারা আপনাদের ব্যবসায়িক বন্ধু খুঁজে নেন, পার্টনার খুঁজে নেন যাতে আমাদের দেশে আরও বেশি বিনিয়োগ আসে। আর এই বিনিয়োগ নিয়ে আসার জন্য আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা, উন্নয়ন এটা কিন্তু রাজধানী কেন্দ্রীক না। একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে গ্রাম পর্যায়ে যাতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে, গ্রামের মানুষের যাতে জীবন মান উন্নত হয়, গ্রামের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যাতে বাড়ে, তাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা যেন আসে আমরা সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে পরিকল্পনা নিয়ে আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘অনেকগুলি প্রজেক্ট আমরা হাতে নিয়েছি। এগুলো আমাদের শেষ করতে হবে। পদ্মাসেতু নির্মাণটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। দুর্নীতির একটা অভিযোগ আমার সরকারের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু তারা প্রমাণ করতে পারেনি। আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। কারণ দুর্নীতি করে এখানে নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। ভাগ্য গড়তে এসেছি বাংলার জনগণের। সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি করাটাই আমার লক্ষ্য। জীবনে কী পেলাম না পেলাম সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না।’

এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরা বক্তব্য দেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর