ধর্ষণের ঘটনায় অবরুদ্ধ বাবা-মেয়ে, অভিযোগ পুলিশের দিকে

ঢাকা, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪ | 2023-08-24 01:00:49

ধর্ষণের শিকার হয়েও পুলিশের ভয়ে ৪ দিন ধরে নিজ বাসাতেই অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুরের মা হারা ১৪ বছর বয়সী কিশোরী মেয়ে ও তার বাবা।

এক বছর বয়সেই মাকে হারিয়েছেন ১৪ বছরের কিশোরী, বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে। হতদরিদ্র বাবা দীর্ঘদিন ধরে মেয়েকে লালন পালন করে একটু ভালো থাকার জন্য গত সাত মাস আগে গাজীপুরের শ্রীপুরে এসে একটি বাসা ভাড়া নেন। টানাটানির সংসারে মেয়েকে স্থানীয় একটি কারখানায় কাজে দেন।

কর্মস্থলে যাওয়া আসার পথে কিশোরীকে প্রায়ই উত্যক্ত করত স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি পিতৃবয়সী আক্তার মোড়ল। সে শ্রীপুর উপজেলার জয়নারায়নপুর গ্রামের সাহিদ মোড়লের ছেলে।

মাস ছয়েক আগে আক্তার মোড়ল তার চারজন সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে কিশোরী মেয়েটিকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে জঙ্গলের ভেতর ধর্ষণ করেন।

কিশোরী মেয়েটি ধর্ষণের কথা তার পিতাকে জানালে আক্তার মোড়ল ও তার সহযোগীরা আরও বেশ কয়েকবার মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। সেই সঙ্গে দুইজনকেই হত্যার হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। ধর্ষণের ঘটনায় কিশোরী মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়লে এলাকায় জানাজানি হয়। এতে আক্তার মোড়ল আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) আক্তার মোড়ল কিশোরী মেয়েটির নিজ বাসায় জোরপূর্বক ঢুকে গর্ভপাতের ওষুধ খাইয়ে দিলে মেয়েটি গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরের দিন কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপরিপক্ক একটি শিশু জন্ম দেন কিশোরী মেয়েটি। উন্নত চিকিৎসার জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন হাসপাতালে নবজাতককে নিয়ে যাওয়া হলে পথেই শিশুটির মৃত্যু হয়।

ঘটনার দিনই থানায় অভিযোগ করেন মেয়েটি। কিন্তু কিশোরী মেয়েটি অভিযোগ দিয়ে ফিরতেই বাড়িতে হাজির হন শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক এখলাস উদ্দিন ফরাজী। সেখানে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে কিশোরী ও তার পিতাকে চাপ দিতে থাকেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। স্বাক্ষর দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় কিশোরীর সামনেই তার পিতাকে মারধর করেন এখলাস। এদিকে ঘটনার মোড় স্থানীয় পুলিশ অন্যদিকে নিচ্ছে দেখে সাথে সাথে কিশোরী ও তার স্বজনরা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হন। পরে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় মামলা হয়।

পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে মামলা হলেও মেয়েটির পুরো পরিবারকে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। দিনে পুলিশ শাসিয়ে গেলেও রাতে আসে সন্ত্রাসীরা।

ঘটনার ব্যাপারে পুলিশের উপপরিদর্শক এখলাস উদ্দিন ফরাজী মেয়ের বাবাকে মারধরের কথা অস্বীকার করে বার্তা২৪ কে জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্তকে ধরার চেষ্টা চলছে।

ঘটনার বিষয়ে বাড়ির মালিক জয়নারায়ণপুর গ্রামের শামীম মিয়া জানান, গত চার দিন ধরেই নিরাপত্তাহীনতায় মেয়ে ও তার বাবা ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে রেখেছেন। কেননা দিনে পুলিশ সাদা কাগজ নিয়ে আসেন, আর রাতে আসেন এলাকার সন্ত্রাসীরা। এমন অবস্থায় আমরাও আতঙ্কে আছি কখন জানি কি হয়ে যায়।

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সাদী জানান, এসব ঘটনা আপোষযোগ্য নয় আর পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগও সত্য নয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১৫ ডিসেম্বর মামলা হয়েছে, আসামি ধরতে পুলিশি চেষ্টা অব্যাহত আছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর