শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যা : পলাতক আসামির ফাঁসির আদেশ

, জাতীয়

সেন্ট্রাল ডেস্ক ২ | 2023-08-31 02:31:11

শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামকে হত্যার দায়ে তার এক সময়ের কথিত বন্ধু পলাতক আসামি মোস্তাফিজুর রহমানকে ফাঁসির দণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। টাঙ্গাইলের বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. ওয়াহিদুজ্জামান শিকদার রোববার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার হিজলহাটি মৃধাপাড়া গ্রামের মফিজ উদ্দিন আকন্দের ছেলে আমিনুল বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) সংগঠক এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। দণ্ডিত মোস্তাফিজুর রহমান মাগুরা জেলার কাদিরপাড়া (পূর্বপাড়া) এলাকার সমসের কারিগরের ছেলে। তিনি মামলার শুরু থেকেই পলাতক বলে আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল সাভারের বাইপাইল থেকে নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পর প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানা পুলিশ ব্রাহ্মণশাসন এলাকায় টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পাশ থেকে তার লাশ থেকে উদ্ধার করে। কিন্তু তখন পরিচয় না জানায় এবং ‘কোনো দাবিদার না থাকায়’ ঘাটাইল থানা পুলিশ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ হিসেবে লাশটি দাফন করে। পরে পত্রিকায় ছাপা হওয়া লাশের ছবি দেখে পরিবারের সদস্যরা আমিনুলকে শনাক্ত করেন। তখন ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে টাঙ্গাইল থেকে লাশ তুলে গাজীপুরে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় আমিনুলকে। এক সময় ডিইপিজেডের নতুন জোনের শাশা ডেনিম টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে কাজ করলেও ২০০৬ সালে চাকরি ছেড়ে তিনি শ্রমিক সংগঠনের কাজে পুরো সময় দিতে শুরু করেন। দণ্ডিত আসামি মোস্তাফিজকে মানুষ তার বন্ধু হিসেবেই চিনত। ওই হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন মানবাধিকার ও শ্রমিক সংগঠন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে। আমিনুলের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ফাহিমাও সে সময় বলেন, শ্রমিকদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে আশুলিয়ার বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানার মালিকদের ‘শত্রু’ হয়েছিলেন তার স্বামী। এ কারণে মালিকরা ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে’ তাকে হত্যা করিয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি সে সময় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোড়ন তোলে। ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেন, আমিনুল হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত না হলে বিদেশি ক্রেতারা ‘ভুল সঙ্কেত’ পাবে। আমিনুলের লাশ উদ্ধারের পর ঘাটাইল থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহীন মিয়া অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে আমিনুলের ভাই রফিকুল ইসলাম ঘাটাইল থানায় আরেকটি এজাহার দেন; সেখানে মোস্তাফিজুর রহমান ও তার সঙ্গে থাকা বোরকা পরা অজ্ঞাতনামা এক নারীকে আসামি করা হয়। ওই এজাহারে বলা হয়, ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় আশুলিয়ায় আমিনুলের সংগঠনের কার্যালয়ে যান মোস্তাফিজুর। সঙ্গে ছিলেন ওই নারী। তারা আমিনুলকে ডেকে নেওয়ার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এজাহারটি পুলিশের করা হত্যা মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। প্রথমে ঘাটাইল থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করলেও পরে তদন্তভার পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় যায়। ২০১২ সালের নভেম্বরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকার সিআইডি। এক বছর তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবীর টাঙ্গাইল জেলা আদালতে মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। এ মামলার বিচার চলার মধ্যেই বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন (বিজিআইডাব্লিউএফ) ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (বিসিডাব্লিউএস) নতুন করে তদন্ত করার দাবি জানায়। তাদের বক্তব্য ছিল, কেবল মোস্তাফিজকে আসামি করে এ হত্যার পেছনের ‘আসল ব্যক্তিদের’ আড়াল করা হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলোর চাপের মধ্যে সরকার সে সময় আসামি মোস্তাফিজুর রহমানের সন্ধান চেয়ে এক লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করে। কিন্তু তাকে আর পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি করেন আইনজীবি মুলতান উদ্দিন আহমেদ। আর পলাতক মোস্তাফিজের পক্ষে মামলা লড়েন রাষ্ট্র-নিযুক্ত আইনজীবী গোলাম মোস্তফা। রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মুলতান উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর