জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অনুরোধ জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) রাত সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে এ দাবি জানায় দলটি। এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেয়।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম বলেন, হাইকোর্ট থেকে জামায়াত ইসলামের যে সকল সদস্য প্রার্থী আছেন তালিকা দিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের নাম পাঠানো হয়েছে। হাইকোর্ট তাদের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। জামায়াতের প্রার্থীরা তাদের হলফনামা যখন দাখিল করেছে তখন তাদের বলতে হয়েছে তারা কোন দলের সদস্য। যারা ধানের শীষ ব্যবহার করছেন তারা বলেছেন বিএনপির, কিন্তু আসলে তো তারা বিএনপির নন। তাদের ওয়েবসাইটে, পত্র-পত্রিকায় পরিষ্কারভাবে প্রত্যেকের অবস্থান উঠে এসেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে তাদের প্রার্থিতা বাতিলের অনুরোধ করেছি।
খালেদা-তারেকের ছবি পোস্টারের ছাপানো আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন দাবি করে তিনি বলেন, পোস্টার সম্পর্কের পরিষ্কার বলা হয়েছে যে নির্বাচনের পোস্টার কত সাইজ হবে। সাদাকালো হবে এবং সেখানে কার ছবি থাকবে। ছবি থাকবে দলের যে বর্তমান সভাপতি তার। আমাদের বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা। আমাদের সব প্রার্থী তার ছবিই ব্যবহার করছেন। বঙ্গবন্ধুর ছবিও কেউ ব্যবহার করছেন না। বিএনপির পোস্টারে খালেদা ও তারেক জিয়ার ছবি ব্যবহার করছেন। এটি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাদের বর্তমান সভাপতি খালেদা জিয়া নন। তাদের মতে বর্তমান সভাপতি তারেক রহমান। তিনি তো দণ্ডিত আসামি। একজন দণ্ডিত আসামির ছবি কিভাবে ছাপানো যেতে পারে। একজন পলাতক আসামির ছবি ছাপানো সম্ভব কিনা এ বিষয়টি আমরা কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছি।
নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হিসেবে ১১৮টি এনজিওকে নির্বাচন কমিশন থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মধ্যে চারটি এনজিওর বিরুদ্ধে আমাদের আপত্তি রয়েছে। এই চারটি হচ্ছে- খান ফাউন্ডেশন, ডেমক্রেসি ওয়াচ, লাইট হাউজ এবং মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হিসেবে এমন কাউকে দায়িত্ব দেয়া যাবে না, যারা কোন দল, ব্যক্তি বা বিশেষ কোন প্রতিষ্ঠানের আর্দশের প্রতি অনুগত। এই চারটি প্রতিষ্ঠানে বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত মন্তব্য করে তিনি এই চারটি এনজিওকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করলাম, বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ নিজেদের নেতাকর্মীদের প্রতি একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। যেখানে নির্বাচনী সমাবেশ হবে, সেখানে একটি লাঠির মাথায় ধানের শীষ প্রদর্শন করা হবে। এটি একটি আচরণ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কদিন আগে আমরা পল্টনে এসব লাঠির নির্মম ব্যবহার দেখেছি। তাই বিষয়টি আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানান এইচ টি ইমাম।
এইচ টি ইমাম বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা ও আক্রমণের স্বীকার হচ্ছেন। এই বিষয়টি এর আগেও আমরা কমিশনে জানিয়েছি। আজও আমরা লিখিতভাবে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে অবগত করেছি এবং এর প্রতিকার চেয়েছি। সারাদেশে আমাদের কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছে অথচ বিএনপি-জামায়াত উল্টো অভিযোগ করে যাচ্ছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে এ ধরণের ঘটনা আমরা প্রতিদিন নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরবো।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের কোন আস্থাহীনতা নেই। এখানে ভিন্নমত থাকতেই পারে। এটি একটি কোর্টের মতো, সেখানে একজন নোট ডিসেন্ট দিতেই পারে। তাই প্রধান নির্বাচন কমিশনসহ সকলের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এইচটিই মাম ছাড়াও বৈঠকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষে রিয়াজুল করিম কাউসার, বিপ্লব বড়ুয়া, নজিবুল্লা হিরু প্রমুখ।