কুমিল্লায় এমপি বাহাউদ্দীন বাহারের দুর্গাপূজা সম্পর্কিত নেতিবাচক বক্তব্যের প্রতিবাদে আন্দোলন করেছিল বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীরা। সেখানে আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ছাত্র ও যুব ঐক্য পরিষদ এবং হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান কালে এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাস গুপ্ত।
এর আগে, মুন্সিগঞ্জের মেয়র ফয়সাল বিপ্লব কর্তৃক স্থানীয় এমপি মৃণাল কান্তি দাসকে 'মালাউন' বলা এবং কুমিল্লা জেলার এমপি বাহাউদ্দীন বাহারের দুর্গাপূজা সম্পর্কিত বক্তব্যের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ’র পর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। সেখান থেকে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ এর আশ্বাসে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করে শাহবাগ থানার সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাস গুপ্ত বলেন, ‘গত চার তারিখে কুমিল্লার জেলা প্রশাসককের কার্যালয়ে দুর্গাপূজাকে শান্তিপুর্ণভাবে পালনের লক্ষ্যে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। সেখানে কুমিল্লা জেলার এম.পি বাহাউদ্দীন বাহার বলেছেন, দুর্গাপূজা নাকি 'মদযুক্ত পূজা'। মদ খাওয়া বন্ধ করলে পূজার সংখ্যা কমে যাবে।
তারই প্রতিবাদে আমরা আজকে সমগ্র বাংলাদেশে যুব ঐক্য পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ, ছাত্র ঐক্য পরিষদ ও মহিলা ঐক্য পরিষদ মিলে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মিছিলের ডাক দিয়েছিলাম। এ পর্যন্ত ঢাকায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এখানে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন। পুলিশের ভাবমূর্তি আমরা নষ্ট করতে চাই না। বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আমরা সম্পূর্ণভাবে সচেতন। কিন্তু ঘা খেতে খেতে আমাদের অবস্থানটা এমন দাঁড়িয়ে গেছে যে, আজকে আমরা যন্ত্রণায় কাতর। আজকে আমাদের অন্তর জ্বলছে।’
তিনি অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ‘ইতোমধ্যেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা চালাচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে এবং অনেকের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়ার একটি সক্রিয় পায়তারা চলছে।’
এ সময় তিনি পুলিশকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আপনা আমাদের উপর কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করতে পারবেন, লাঠিপেটা করতে পারবেন, তাতে আমাদের দুঃখবোধ থাকবে না। কিন্তু আমরা আমাদের যন্ত্রণার অবসান চাই। আমরা আমাদের দুঃখের অবসান চাই। যারা আমাদের ভোটে এমপি হয়, গাড়ি পায়, আজকে তারাই আমাদের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আপনাদের দাবি আমরা শুনেছি, কতৃপক্ষের মধ্য দিয়ে সেটা সরকারের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করবো। কিন্তু আপনারা যে জায়গা বেছে নিয়েছেন, সেটা ঠিক জায়গা নয়। এখানে দু’পাশে বড় বড় দু’টা মেডিকেল এবং পাশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে আন্দোলন করলে হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। অ্যাম্বুলেন্স গুলো দাঁড়িয়ে থাকবে। আমি আপনাদেরকে জাদুঘরের পাশে জায়গা করে দিচ্ছি আপনারা সেখানে আন্দোলন করতে পারেন।’
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৪ অক্টোবর কুমিল্লা ৬ আসনের এমপি বাহাউদ্দীন বাহারের দুর্গাপূজা একটি 'মদযুক্ত' পূজা সম্পর্কিত একটি বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তিনি বলেন, ‘মদ খাওয়া কমিয়ে দিলে পূজার সংখ্যা কমে যাবে।’
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফয়সাল বিপ্লব এমপি মৃণালকে উদ্দেশ্য করে 'মালাউন' নপুংশক, চাঁড়াল' বলে গালমন্দ করলে সেই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।