পাবনার খ্রিস্টান পল্লীতে উৎসবের আমেজ

রাজশাহী, জাতীয়

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, পাবনা, বার্তা২৪ | 2023-08-31 22:24:08

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন উপলক্ষে পাবনার ৩০টি গ্রামে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষদের মাঝে এখন উৎসবের আমেজ চলছে। গির্জা, বাড়ি আলোকসজ্জা, গোশালা তৈরি, ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়েছেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষেরা। স্বজনদের সাথে বড়দিনের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন কর্মজীবী মানুষরা।

তথ্যমতে, দুই হাজার বছর আগে বর্তমানের ফিলিস্তিনের বেথেলহেমের এক গোশালায় মাতা মেরির গর্ভে জন্ম নিয়েছিলেন যিশু খ্রিস্ট। সেই থেকে প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর সারাবিশ্বের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা মহাসমারোহে পালন করেন যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন। তিনি মানুষকে দেখিয়েছিলেন মুক্তি ও কল্যাণের পথ।

সেই যিশু খ্রিষ্টের জন্মতিথি ‘বড়দিন’ উদযাপনে পাবনা জেলার ৩০টি গ্রামের খ্রিস্টান পল্লী এখন উৎসব মুখর। গির্জা বা উপাসনালয়গুলো সাজানো হয়েছে নানা রংবেরঙের সাজে। এছাড়া বাড়িঘর আলোকসজ্জা, গোশালা তৈরি, ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়েছেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষজন। আলপনার রঙে গির্জা ও বাড়ির আঙিনা সেজেছে নতুন সাজে।

স্বজনদের সাথে বড়দিনের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইতিমধ্যে পাবনার গ্রামের বাড়িতে এসেছেন পেশাজীবী মানুষ। বড়দিন ঘিরে অতিথিদের আপ্যায়ন করতে বাড়ির গৃহিণীরা বাড়িঘর আলোকসজ্জা আর পিঠাপুলির আয়োজন করেছেন।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ও ভাদড়া গ্রামের মালতী কস্তা, প্রীতি কস্তা, রিনা রোজারিও, রবিতা গোমেজ ও মার্টিন গোমেজ জানান, বড়দিন উপলক্ষে আমাদের প্রত্যেকের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। সে কারণে আমরা সাধ্যমতো প্রত্যেক বাড়িতে সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা করেছি। আলপনা আঁকা হয়েছে বাড়ির আঙিনা, দেয়ালসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রভু যিশু খ্রিস্ট বেথেলহামের যে গোশালায় জন্মেছিলেন, তার আদলে প্রত্যেক বাড়িতে গোশালা স্থাপন ও সেটিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।

পাবনা শহরের দক্ষিণ রাঘবপুর এলাকার গৃহিনী রীনা বর্মণ জানান, বড়দিনের আনন্দ ভাগ করে নিতে বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে এসেছেন। আমরা ঘর সাজিয়েছি, ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়েছি, গোশালা তৈরি করেছি। অতিথিদের জন্য পিঠাপুলি, পায়েশসহ বিভিন্ন খাবার তৈরি করেছি।

পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সাধারণ সম্পাদক স্টিফেন সরকার জানান, বড়দিন ঘিরে আমরা সপ্তাহব্যাপী অনেক রকমের আয়োজন করা হয়েছে। এসব আয়োজনের মধ্যে নগর কীর্তন, বড়দিনের উপাসনা, কেক কাটা, পিঠা পর্ব, প্রীতিভোজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে। আমরা আশা করি প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আমরা এবারের বড়দিনের উৎসব উদযাপন করতে পারব।

চাটমোহরের মথুরাপুর ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত ফাদা দিলীপ এস কস্তা জানান, আমাদের পাপ থেকে পরিত্রাণের জন্য এবং অন্তরের অন্ধকার দুর করে আলোর পথ দেখানোর বানী নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন যিশু খ্রিষ্ট। জগতে শান্তি-ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং সবার মাঝে ভাতৃত্ব মিলন বজায় রাখার আহবানে পালিত হবে এবারের বড়দিন।

পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম পিপিএম জানান, আসন্ন বড়দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে বড়দিন উদযাপন করতে পারেন সেজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সকল চার্চে, গির্জায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছেন।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর