নাম হারেজ মণ্ডল। বয়স ৭৫ বছর। জিলাপি বিক্রি করে সংসার চালান তিনি। বয়সের ভারে চলতে অসুবিধা হলেও সংসার চালানোর তাগিদে তাকে ঘর থেকে বের হতে হয় নিয়মিত। একটু সুখে বেঁচে থাকার জন্য জীবনের এই শেষ প্রান্তে এসেও তাকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। জিলাপি বিক্রি করে যে আয় হয়, তা দিয়েই চলে তার সংসারের চাকা।
শুধু হারেজ মণ্ডলই নয়, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া বাজারে এ রকম প্রায় ১৫ জন তাদের সংসার চালান জিলাপি বিক্রি করে।
নারুয়া ইউনিয়নের টাকাপোড়া গ্রামের জিলাপি বিক্রিতা হারেজ মণ্ডল জানান, সংসারে স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন। ছোট ছেলে পান্নুকে সঙ্গে নিয়ে তিনি জিলাপি বানান। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত একই জায়গায় বসে জিলাপি বিক্রি করেন তিনি। তার বাবাও জিলাপি বিক্রি করে সংসার চালাতেন। নারুয়া বাজারে প্রতি শুক্র ও সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জিলাপি বিক্রি করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, চিনির তৈরি প্রতি কেজি জিলাপির মূল্য ৭০ টাকা এবং আখের গুড়ের জিলাপির মূল্য ৮০ টাকা। জিলাপি বিক্রি করে যে অর্থ আয় হয় তা দিয়েই চলছে তাদের সংসার।
একই এলাকার জিলাপি বিক্রেতা হাফিজ, বদর ও ফারুক জানান, রাজবাড়ী জেলার পাংশা, গোয়ালন্দ, কালুখালী ও সদর উপজেলার মধ্যে আমাদের বালিয়াকান্দির নারুয়া বাজারের তৈরি জিলাপির বেশ কদর রয়েছে। বিশেষ করে আখের গুড়ের তৈরি জিলাপি পার্শ্ববর্তী জেলা মাগুরাতেও বেশ জনপ্রিয়। প্রতি হাটের দিন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা থেকে মানুষ আসে গুড়ের তৈরি জিলাপি খেতে। তাছাড়া যারা বাজারে আসেন তারা প্রত্যেকেই বাড়ি ফেরার সময় পরিবারের সদস্যদের জন্য জিলাপি কিনতে কখনোই ভুল করেন না। এক কেজি হলেও প্রিয়জনদের জন্য তারা জিলাপি কিনে নিয়ে যান। বাড়ি ফেরার পথে সবার হাতেই থাকে তাদের তৈরি জিলাপি। আর এই জিলাপি বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তাদের পুরো সংসার।
মাগুরার শ্রীপুরের দূর্গাপুর গ্রামের ক্রেতা এনামুল মোল্লা বলেন, ‘নারুয়া বাজারের তৈরি জিলাপির আলাদা স্বাদ রয়েছে। তাই আমরা প্রতি হাটের দিন গুড়ের তৈরি জিলাপি খেতে এই বাজারে ছুটে আসি। এখানকার তৈরি জিলাপির বেশ সুনাম রয়েছে।’
নারুয়া বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গণি শেখ জানান, নারুয়া বাজারের তৈরি জিলাপি খুবই সুস্বাদু ও প্রসিদ্ধ খাবার। শুধু এই অঞ্চলেই নয় পার্শ্ববর্তী এলাকাতেও এই জিলাপির বেশ সুনাম রয়েছে। এই বাজারে যারা জিলাপি বিক্রি করে থাকে তারা সবাই মূলত দরিদ্র। তবে এরা জিলাপি বিক্রি করে বর্তমান বেশ সুখে আছেন।