তাজুল চৌধুরী ও আমাদের রাজনীতি

ঢাকা, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-12-31 18:03:31

সাত বারের নির্বাচিত এমপি, ছিলেন এরশাদ সরকারের ভূমিমন্ত্রী। অথচ ঢাকায় শেষ দিন পর্যন্ত থেকেছেন ভাড়া বাসায়। এখানেই শেষ নয়, তার ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের জন্য কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। শুধু সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত সম্মানীর জন্য একটিমাত্র ব্যাংক হিসাব রয়েছে তার।

গ্রামে কোনো বাড়ি করেননি, কেনেননি জমি-জমা। ঢাকাতেও তার নামে এক শতাংশ জমি নেই। এমন অবাক করার মতোই তথ্য পাওয়া গেছে প্রয়াত তাজুল ইসলাম চৌধুরীর সম্পর্কে। অনেকেই এই কথা বিশ্বাস করতে চান না। কেনইবা করবেন, এখন তো একবার এমপি হলেই কোটিপতি হয়ে যাচ্ছেন অনেকে, সেখানে এমন জীবন কল্পনা করা যায়!

 

একসময় যারা রিকশা অটোতে চলতো, তারা এমপি নির্বাচিত হয়ে কোটি টাকার গাড়ি হাঁকান। অনেকের বাসার গ্যারেজে শোভা পায় একাধিক গাড়ি। গ্রামে ও ঢাকা গড়েন অট্টালিকাসম বাড়ি। এমন চিত্র কিন্তু দুর্লভ নয়, অহরহই চোখে পড়ে।

আর তিনি সাত-সাতবার এমপি হয়েছেন, প্রথমে কৃষি প্রতিমন্ত্রী, এরপর যথাক্রমে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সর্বশেষ ভূমি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যখন ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তখনকার রাজধানী ঢাকার কথা একবার ভেবে দেখেন। কতজমি তার হাতে!

চাইলে দু’চার একর নামে-বেনামে নিজের নামে করে নিতে পারতেন। কিন্তু না তিনি তা করেননি। ইস্কাটন এলাকার ইস্কাটন প্লাজায় ভাড়ায় কাঁটিয়ে দিয়েছেন ২২টি বসন্ত। এখান থেকেই বিদায় নিয়েছেন অনন্তের পথে।

নতুন এমপিরা যখন প্রাডো হাকিয়ে সংসদে যান, তাজুল ইসলাম তখন সেই পুরোনো মডেলের নিসান এক্সটেল গাড়ি নিয়ে সংসদে যেতেন। কখনও দামী গাড়ি কেনার স্বপ্ন দেখেননি। অথচ তার সম-সাময়িক অনেক এমপি প্রত্যেকবার নির্বাচিত হওয়ার পর, নতুন ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনেছেন শুল্কমুক্ত সুবিধায়।

১৯৭৯ সালে প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে কুড়িগ্রাম-২ (সদর) আসনের প্রতিবারেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এভাবে এই আসনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন। এরপর প্রত্যেকবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। ২০০৮ ছাড়া প্রত্যেকবার জয়ী হয়েছেন।

কুড়িগ্রামের ভোটের মাঠে হয়ে উঠেছিলেন অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই ভোটের মাঠে না থেকেও ব্যাপক আলোচনায় প্রয়াত তাজুল ইসলাম। কুড়িগ্রামের শপিং মল থেকে ফুটপাতের চায়ের দোকান সর্বত্র তারই আলোচনা। কুড়িগ্রামের লোকজন এতোদিন বাক্স ভরে ভোট দিয়েছে। তারা এখন তার জীবনালেখ্য আলোচনার পূর্বে স্যালুট ঠুকছে।

চা দোকানী সোহেল রানা বলেন, তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। তাজুল ইসলামের মতো এমন সৎ রাজনীতিবিদ, এদেশে খুব কমই আছে। শুধু শেখ হাসিনার সঙ্গে তার তুলনা চলে, আর কারও সঙ্গে চলে না। এই যুগে অচল তাজুল ইসলাম তুমি চলে গিয়ে ভালোই করেছো। তা না হলে তোমাকে অন্যরা দূষিত করার চেষ্টা করতো।

তাজুল ইসলাম চৌধুরীর সহধর্মিনী সামছুন্নাহার চৌধুরীর মুখোমুখি হয়েছিলো বার্তা২৪.কম। ইস্কাটনের ভাড়া বাসাতেই থাকেন তিনি। তাজুল ইসলাম তাকে যেখানে রেখে চলে গেছেন। বলেন, এমনভাবে চলে গেলেন, কিছুই বলে গেলেন না। হাসাপাতালে যাওয়ার সময়ও কিছু বলে গেলেন না। আমাদেরকে সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে গেলেন।

বারডেমে ছিলেন, ডাক্তাররা তাকে ইউনাইটেডে নিতে পরামর্শ দিল। ইউনাইটেডের ইমার্জেন্সিতে রাত ৯টায় লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। তিনি চলে গেলেন রাত ১১টায়। আমি এখন কি করবো, কোথায় যাবো। তিনি কখনও নিজের কথা ভাবেননি। সবসময় দেশ ও এলাকার লোকের কথা ভাবতেন।

আক্ষেপ করে বলেন, কেউ একদিনের জন্য খবর নিলো না আমার। অথচ তাজুল ইসলাম বেঁচে থাকার সময় কতজন বাসায় আসতেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তাজুল ইসলামের শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সংসদে যেভাবে সম্মান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, এতে আমার শূন্য বুকটা ভরে গেছে। রওশন এরশাদও আমাকে বেঁচে থাকার সাহস দিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর