ভোট গ্রহণে প্রস্তুত রংপুর বিভাগ

রংপুর, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 15:58:50

রাত পোহালেই ভোট। সারাদেশের মতো রংপুর বিভাগের আট জেলাতেও ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ছয় স্তরের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে নেওয়া হয়েছে পুরো বিভাগকে। উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ বিভাগের আট জেলায় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের মোট ২১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ভোটগ্রহণে স্বচ্ছ ব্যালট বক্স, ব্যালট পেপার, সিল ও ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রতিটি কেন্দ্রে পাঠানোর কাজও শেষ হয়েছে। শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজ মাঠ থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে নিজ নিজ কেন্দ্রের জন্য সরঞ্জামাদি গ্রহণ করেন।

রংপুর বিভাগের ১ কোটি ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ২৬৪ জন ভোটারের ভোটগ্রহণে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৭৩ হাজার ৪১৩ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে ৮ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ১১৬ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৪ হাজার ৪৯২ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ২২ হাজার ৯৩৩ জন সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ৪৫ হাজার ৮৬৬ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করার পর তাদের এক সপ্তাহব্যাপী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ বিভাগের ৩৩টি আসনের মধ্যে রংপুর-৩ (সদর ও সিটি কর্পোরেশন) আসনে ইলেক্ট্রনিক্স ভোটিং মেশিমে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বাকি সবগুলোতে সনাতন পদ্ধতিতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট দেবেন ভোটাররা।

ভোটগ্রহণের জন্য রংপুর বিভাগের ৪ হাজার ৪৯২টি ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব ভোট কেন্দ্রের ১ হাজার ৮৩১টি ভোট কক্ষের জন্য ছয় স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মোতায়েন করা হয়েছে ২ হাজার সেনা সদস্যসহ ৭২ হাজার ৪৯০ জন বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ। এ ছাড়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে ৭১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং ২৭০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স পরিচালনার জন্য দেওয়া হয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। বিচার বিভাগের অধীনে ১৪টি নির্বাচন তদন্ত টিম মাঠে কাজ করছে।

রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে জানান, রংপুর বিভাগের আটটি জেলার ৩৩টি সংসদীয় আসনে এবার ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ২৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৭ লাখ ৬২ হাজার ২৩৯ এবং নারী ভোটার ৫৮ লাখ ২৩২ হাজার ২৫ জন। রংপুর জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৫ জন, পঞ্চগড়ের ২টি আসনে ৭ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৮ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৩টি আসনে ৯ লাখ ৯৫ হাজার ১৭৬ জন, দিনাজপুরের ৬টি আসনে ২২ লাখ ৬ হাজার ৪৪০ জন, নীলফামারীর ৪টি আসনে ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৮ জন, লালমনিরহাটের ৩টি আসনে ৯ লাখ ১৫ হাজার ৭৮৮ জন, কুড়িগ্রামের ৪টি আসনে ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৪ জন এবং গাইবান্ধা জেলার ৫টি আসনে ১৭ লাখ ৮৪ হাজার ৫৪৫ জন ভোটার রয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনের ৫৪টি উপজেলায় নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। অন্যদিকে ৪ হাজার ৪৯২টি কেন্দ্রের প্রতিটিতে ১ জন করে ছাড়াও প্রায় দেঢ় হাজার অধিক গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রে আরও অতিরিক্ত ১ জন করে সর্বমোট ৫ হাজার ৯৯২ জন অস্ত্রধারী পুলিশ। প্রতিটি কেন্দ্রে অস্ত্রসহ একজন আনসার এবং অস্ত্র লাঠিসহ ৬ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলা আনসারসহ সর্বমোট ৪৯ হাজার ৪১২ থাকবে। এ ছাড়া কেন্দ্র প্রতি একজন করে মোট ৪ হাজার ৪৯২ জন গ্রাম পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বিভাগের রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ড, ২৭টি পৌরসভার ২৪৩টি ওয়ার্ড এবং ৫৮টি উপজেলার ৫৩৬টি ইউনিয়নে মোট ৮১২টি ওয়ার্ড/ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার ৩০ জন সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ২টি ওয়ার্ড/ইউনিয়ন মিলে একটি করে গাড়িতে ৫ জন সেনা সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া প্রতিটি সিটি/পৌরসভা/উপজেলায় বিজিবির ৩ প্লাটুন করে মোট ৮ হাজার ৮৬০ বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যারা প্রতিটি সিটি/পৌরসভা/উপজেলায় ৫ ভাগে বিভক্ত হয়ে মাঠে থাকবেন। রংপুর বিভাগে প্রায় ১ হাজার ২০৪ জন র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যারা প্রতিটি সিটি, পৌরসভা ও উপজেলায় ১৪ জন করে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এসব স্ট্রাইকিং ফোর্সকে পরিচালনা এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনার জন্য ৩টি করে ইউনিয়ন/ওয়ার্ড মিলে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে ২৭০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে রংপুর বিভাগে ৭১ জন জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৭১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে ১ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত মাঠে কাজ করবে। এ সময় তারা নির্বাচনী অপরাধসমূহ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৮৯ এর সেকশন ১৯০ এর সাব সেকশন-১ এর অধীনে আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচার পরিচালনা করবেন।

এ ছাড়া এই বিভাগে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নির্বাচন পূর্ব ও পরের অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে ১৪টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাদের দায়িত্বে আছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার যুগ্ম ও জেলা দায়রা জজ এবং সহকারী জজ মর্যাদার বিচার বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর