এরশাদ কি পারবেন সূচক ঘুরিয়ে দিতে

ঢাকা, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-31 03:54:02

ভোটের অংকে জাতীয় পার্টির সূচক বরাবরই নিম্নগামী। অসুস্থ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কি এবার পারবেন বেকর্ড ভাঙতে? এমন প্রশ্নে দলটির নেতাদের হতাশা ব্যক্ত করতে শোনা গেছে।

নেতারা বলেছেন, জাতীয় পার্টির ইতিহাসে এমন বাজেভাবে আর কখনও নির্বাচন পরিচালিত হয়নি। এরশাদ অসুস্থ থাকায় অভিভাবকহীন দল। অনেক আসনে প্রার্থী আছে কিন্তু নেতাকর্মীরা অন্যদলের হয়ে কাজ করছে। কেন্দ্র থেকে প্রার্থীদের কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি, প্রার্থীরা নিজের মতো করে যতটুকু পেরেছে সেভাবেই প্রচারণা করেছে। যে কারণে অনেক আসনে লজ্জাজনক পরিণতি হতে পারে।

গণআন্দোলনের মুখে বিদায়ের পর প্রথম ১৯৯১ সালে নির্বাচনে কাস্টিং ভোটের ১১.৯২ শতাংশ পেয়েছিলো জাতীয় পার্টি। ১৯৯৬ সালে ১০.৬৭ শতাংশ, ২০০১ সালের ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট পান ৭.২৫ শতাংশ। আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে পেয়েছে মাত্র ৭.০৪ শতাংশ।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন অংশ নেয়। কিন্তু যে আসনেই জোট ছাড়া নির্বাচন করেছে সেখানেই ধরাশায়ী দলটির হেভিওয়েট প্রার্থীরা। জাতীয় পার্টির দূর্গখ্যাত বৃহত্তর রংপুরের ৩টি আসনেও ধরাশায়ী হন শীর্ষ নেতারা। আসনগুলো হচ্ছে- রংপুর-৪, ৫ ও গাইবান্ধা একটি আসনে বিপুল ভোটে জাপার হেভিওয়েট প্রার্থীরা।

এরপর উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে শোচনীয় হার বরণ করতে হয় ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর দলটিকে। এমনিতেই দলের বেহাল অবস্থা তার ওপর নির্বাচনের প্রচারণায় ভাটা। অন্যদিকে মহাজোট থেকে আশানুরূপ আসন না পাওয়া। জাপার দূর্গ রংপুরে আসন হাতছাড়া নিয়ে কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা। তারা মনে করছেন স্বাভাবিকভাবে এবারের নির্বাচনে জাপার ভালো ফল আশা করা কঠিন।

এবারের নির্বাচনে মহাজোটের পক্ষ থেকেও হতাশ নেতাকর্মীরা। জাপার দূর্গখ্যত বৃহত্তর রংপুরের ২২ আসনের মধ্যে মাত্র ৭টি পেয়েছে জাপা, আওয়ামী লীগ পেয়েছে ৪টি, আর ২১টি আসন রাখা হয়েছে উন্মুক্ত। এসব আসনে নৌকা-লাঙ্গল দুই মার্কায় থাকছে। এই অঞ্চলের আসনগুলোই সবচেয়ে ভালো ফলের আশা করা হয়। সেই আসনগুলো হাতছাড়া। উন্মুক্ত আসনগুলোতে যে ভালো ফল করবে তার জন্য তেমন নার্সিং করা হয়নি।

জাতীয় পার্টি মহাজোটগতভাবে ২৪টি আর উন্মুক্ত ১৩৮ আসনে নির্বাচন করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে বিগত নির্বাচনের তুলনায় এবার ফল খারাপের আশঙ্কা করছেন জাপা নেতারা। জাপা ২০০১ সালে ১৭ আসনে বিজয়ী হয়, ২০০৮ সালে জোটগতভাবে নির্বাচন করায় ২৭টি আসনে পায়। আর বর্তমানে রয়েছে ৩৪ জন সংসদ সদস্য। কিন্তু এবার আসন ২০ এর নিচে নেমে যেতে পারে বলে শঙ্কা করছেন অনেকেই।

আবার পার্টির চেয়ারম্যানের সকাল-বিকাল সিদ্ধান্ত বদলে লাঙ্গলে ভাটার টান লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে মনে করছেন, নেতৃত্বের সংকটে জাপার প্রতি মানুষের আগ্রহ করে যাচ্ছে। যে কারণে নিম্নগামী সূচকের ধারা এবারও অব্যহত থাকতে পারে।

তবে এরশাদ এ কথা মানতে নারাজ। তিনি একাধিক জনসভায় বলেছেন, জাতীয় পার্টির জনসমর্থন আগের চেয়ে বেড়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মাত্র কয়েকটি ৪৯টি আসনে নির্বাচন করেছি। এরমধ্যে মাত্র ৩৪ আসনে জোটগতভাবে নির্বাচন হয়েছে। এতে ২৭টি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। আর কোনো দল এমন সাফল্য পায়নি।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, সূচক কিছুটা উঠা-নামা করলেও জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে এমনটা কিন্তু নয়। যেখানেই যাচ্ছি মানুষ আমাদের কথা শুনতে চাচ্ছে। জাপার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর