৬৮ বছর পর মংলাতে কাস্টমের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম

খুলনা, জাতীয়

আবু হোসাইন সুমন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 21:31:44

আমদানি-রফতানিসহ সংশ্লিষ্ট বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে কয়েক বছর আগেই মংলা কাস্টম হাউস খুলনা থেকে মংলা বন্দর এলাকায় পূর্ণাঙ্গ স্থানান্তরে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও দীর্ঘদিনেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৭ সালের ৫ আগস্ট মংলা বন্দর উপদেষ্টা কমিটির ১৪তম সভায় নৌ পরিবহণ মন্ত্রীর নির্দেশনাও আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।

এর আগেও ২০১১ সালে নৌ মন্ত্রী খুলনার খালিশপুর থেকে মংলা কাস্টম হাউস মংলা বন্দরে স্থানান্তরের নির্দেশনা দিলেও সেটিও বাস্তবায়ন হয়নি। অবশেষে এ মাসেই (জানুয়ারি) মংলা কাস্টম হাউস মংলাতেই পূর্ণাঙ্গভাবে স্থানান্তর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মংলা কাস্টম হাউসের কমিশনার সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস।

তিনি বলেন, 'আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে মংলা বন্দরে কাস্টমের নতুন ইউনিট থেকে চালু করা হবে। খুলনাস্থ মংলা কাস্টম হাউসের রফতানি শুল্কায়ন ও আমদানি শুল্কায়ন গ্রুপ-২ এবং ৪ এর শুল্কায়নসহ সকল কার্যক্রম চালু করতে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে।'

কাস্টম কর্তৃপক্ষ ও বন্দর সূত্র জানায়, ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামুদ্রিক বন্দর হিসেবে মংলা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকেই মংলা কাস্টম হাউস খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত হওয়ায় ব্যবসায়ীদের অনেক সময়ক্ষেপণের পাশাপাশি নানাবিধ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ব্যবসায়ীরা আমদানি-রফতানির স্বার্থে মংলা কাস্টম হাউস মংলা বন্দরে রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

মংলা বন্দর ব্যবহারকারী মেসার্স নুরু এন্ড সন্স’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব এইচ এম দুলাল ও মেসার্স মায়া এন্টারপাইজের পরিচালক আহসান হাবিব হাসান বলেন, 'মংলা বন্দর থেকে সড়ক পথে খুলনার খালিশপুর পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ৫৮ কিলোমিটার। মংলা কাস্টম হাউস খুলনাতে হওয়ায় একজন ব্যবসায়ীকে শুল্কায়নসহ পণ্য খালাসের কাজ কর্মে দুই থেকে তিন দফায় খুলনা-মংলা যাতায়াত করতে হয়। এতে সময় নষ্টের পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ব্যবসায়ীদের এ ভোগান্তি দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে চলে আসলেও দাবি থাকা স্বত্বেও এখন পর্যন্ত মংলা কাস্টমের কার্যক্রম মংলা বন্দরে স্থানান্তর হয়নি। ফলে নিরুপায় হয়ে ভোগান্তির মধ্যদিয়েই ব্যবসায়ীদের এ বন্দর ব্যবহার করতে হচ্ছে।'

বন্দর ব্যবহারকারীরা আরও বলেন, 'মংলা বন্দর থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হলেও যথাস্থানে কাস্টম হাউসের মূল অফিস না থাকায় ব্যবসায়ীদের ভয়াবহ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বন্দরের কাজ শেষ করে কাস্টম ক্লিয়ারেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে খুলনায় যেতে হয়। পরে ওই কাগজ নিয়ে আবার বন্দরে ফিরে এসে সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা দিতে হয়।'

সিএন্ডএফ (ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং) এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো: সুলতান আহমেদ বলেন, 'শুধু কার্যালয় মংলায় আসলেই তো সমস্যার সমাধান হবে না। শুল্কায়ন কার্যক্রমের সাথে বেশ কিছু কার্যক্রম জড়িত। ব্যাংকিং সেবা, ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ), শিপিং এজেন্সির কার্যক্রমসহ বেশ কিছু কার্যালয়ও শুল্ক কার্যালয়ের সাথে সাথে মংলায় স্থানান্তর করতে হবে।'

মংলা কাস্টম হাউসের কমিশনার সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, 'প্রতিষ্ঠার পর থেকে মংলা বন্দরের আমদানি-রফতানি পণ্যের কাস্টম সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কার্যক্রম খুলনা ও মংলা এ দুস্থানে সম্পন্ন হয়ে আসছে। পণ্য পরীক্ষা, রামেজ (ঘোষণার অতিরিক্ত কোন পণ্য জাহাজে আছে কিনা তা পরীক্ষা), ইপিজেড পণ্য পরীক্ষা ও শুল্কায়ন, পণ্য খালাস, প্রিভেন্টিভসহ (নিবারকমূলক কার্যক্রম) আনুষঙ্গিক কার্যক্রম মংলা কাস্টমস হাউসের বন্দর ইউনিট অর্থাৎ মংলা বন্দরে সম্পন্ন হচ্ছে। অন্যদিকে সকল প্রশাসনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি আইজিএম (জাহাজে আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষণা) দাখিল, আমদানি ও রফতানিকৃত পণ্যের শুল্কায়ন, ব্যাংকিং কার্যক্রম ও রাসায়নিক পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত মূল কার্যালয়ে সম্পন্ন হয়ে আসছে। তবে মংলা বন্দর উপদেষ্টা কমিটির ১৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে মংলা ইউনিট থেকে সকল কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এজন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।'

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডোর একেএম ফারুক হাসান বলেন, 'আমরা চাই যে কোন মূল্যেই মংলা বন্দরের সাথেই কাস্টম কার্যালয় স্থানান্তরিত হোক। আপাতত সমস্যার সমাধানের জন্যে আমাদের ট্রাফিক বিভাগের কিছু কক্ষ তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু তাতে তাদের পুরো কার্যক্রম সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ সমস্যা সমাধানে যত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সেটি আমাদের বন্দরের জন্যেই মঙ্গল হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর