বিরোধীদল নেতা প্রশ্নে চ্যালেঞ্জে পড়তে পারেন এরশাদ

ঢাকা, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-23 10:03:52

জাতীয় পার্টি বিরোধীদলের আসনে বসবে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এই সিদ্ধান্ত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা খুশি। কিন্তু একদিন আগে সরকারে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা অনেক নাখোশ।

পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা সরকারে থাকার কথাই মিডিয়াকে বলেছিলেন শপথ নেওয়ার পর। কিন্তু একদিন পর ৪ জানুয়ারি গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এরশাদ বিরোধীদলে থাকার কথা জানান। একইসঙ্গে তিনি নিজে সংসদীয় দলের নেতা ও ছোট ভাই জিএম কাদেরকে উপনেতা হিসেবে ঘোষণা করেন।

পার্টি সূত্র জানিয়েছে, বিরোধীদল প্রশ্নে এরশাদ ও রওশনের মধ্যে ঐক্যমত রয়েছে। জিএম কাদের প্রথমদিকে মন্ত্রিসভায় যোগদানের আগ্রহ দেখালেও পরে বিরোধীদলের বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছেন। সে কারণে সংসদ সদস্যরা বেঁকে বসেও খুব একটা সুবিধা করতে পারতো না। কিন্তু আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত রওশন এরশাদকে ক্ষিপ্ত করেছে।

সেটি হচ্ছে সংসদ নেতা ও উপনেতা প্রশ্নে। তাকে বাদ দিয়ে এরশাদ নিজে হয়েছেন বিরোধীদল নেতা আর ছোট ভাই জিএম কাদেরকে করেছেন বিরোধীদলের উপনেতা। রওশন বিদায়ী সংসদে বিরোধীদল নেতা ছিলেন। তাকে সাইড লাইনে বসিয়ে রাখাটা তিনি খুব একটা ভালো চোখে দেখবেন না মনে করেন মধ্যসারির নেতারা। এতে এরশাদের দু’টি সিদ্ধান্তই চ্যালেঞ্জে মুখে পড়তে পারে। রওশনের এই নাখোশ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে ভন্ডুল হতে পারে এরশাদের সিদ্ধান্ত।

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে যখন জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করা হয় তখন ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন রওশন ও তার অনুসারীরা। গঠনতন্ত্রে না থাকলেও দুই মাসের মাথায় বাধ্য হয়ে স্ত্রী রওশন এরশাদকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান করা হয়। দেবর-ভাবির (কাদের–রওশন) দ্বন্দ্ব কিন্তু অনেক পুরনো। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে এরশাদ হঠাৎ করে নির্বাচন বর্জণের ঘোষণা দিলে এরশাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন জিএম কাদের। আর রওশনের নেতৃত্বে ৭৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন।

নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ব্যাপক সমালোচনা করেন জিএম কাদের। বিশেষ করে একই সঙ্গে বিরোধীদল ও মন্ত্রিসভায় থাকা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করে আসছিলেন। এতে তৃণমূলে কাদেরের জনপ্রিয়তা বাড়লেও রওশন ও তার অনুসারীদের সঙ্গে সাপে নেউলে সম্পর্ক তৈরি হয়। আইডিইবিতে এক অনুষ্ঠানে এরশাদের উপস্থিতিতেই জিএম কাদের ও রওশন অনুসারী জিয়াউদ্দিন বাবলুর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।

সম্প্রতি দেবর-ভাবির সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তাকে বাদ দিয়ে সবকিছু করা হলে তাতে হয়তো বাগড়া দিয়ে বসতে পারেন রওশন। এতে সলতে যোগাবে নবনির্বাচিত এমপি ও মন্ত্রিসভায় যোগদানে আগ্রহীরা। নবনির্বাচিতদের কথা হচ্ছে, তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করেছেন। তারা অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বিরোধীদলের আসনে বসলে সেভাবে উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি পালন করা সম্ভব হবে না। আবার পদে পদে নানা রকম বাঁধার মুখে পড়তে হতে পারে। এতে তাদের ভবিষ্যত রাজনীতি ঝুঁকিতে ফেলবে।

মধ্যমসারীর নেতারা মনে করছেন, রওশন ক্ষেপে গেলে তার পাশেই দাঁড়াবে সংসদ সদস্যরা। বিগত সংসদের পুরোটা সময় ধরে সংসদ সদস্যরা রওশন এরশাদের পেছনে ছিলেন একাট্টা। এরশাদ অনেকবার এমপিদের হুমকি-ধামকি দিলে তাতে কিন্তু পাত্তা দেয়নি।

বিরোধীদল নেতার প্রশ্নে রওশন এরশাদের কিছুটা আগ্রহ রয়েছে তার একটি বক্তব্যে ই্ঙ্গিত বহন করে। শপথ গ্রহণের পর নবনির্বাচিত এমপিদের অনির্ধারিত বৈঠকের পর রওশন এরশাদের কাছে বার্তা২৪.কম এর পক্ষ থেকে প্রশ্ন ছিলো- আপনি নাকি আবারও জাপার পার্লামেন্টারী পার্টির নেতা হচ্ছেন। জবাবে বলেছিলেন, আমি আশাবাদী। মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে।

তবে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, জাতীয় পার্টিতে কোনো মতভেদ নেই। এরশাদের নেতৃত্বে সবাই রয়েছেন একাট্টা। এমপিদের বৈঠকেও পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে পার্লামেন্টারী পার্টির নেতা চূড়ান্ত করার মতামত দেওয়া হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর