ক্যালেন্ডারের পাতা নির্দেশ করছে সময় এখন জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে। আর মাত্র বারো দিন পরেই পহেলা ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে ভাষা আন্দোলনের স্মরণে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা-২০২৪। এরইমধ্যে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি পর্বের কাজ প্রায় গুছিয়ে নিয়েছে বাংলা একাডেমি। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে বইমেলা। তবে এবার বইমেলার আয়োজনের কাজ বাংলা একাডেমি কারো হাতে তুলে না দিয়ে নিজেরাই সম্পাদন করছে। এখন চলছে শেষ মুহুর্তের বইমেলা প্রস্তুতি।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাঁশ, কাঠ, রঙ, টিনসহ নানারকম নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে স্টল নির্মাণের কাজে ব্যস্ত নির্মাণ শ্রমিকরা। স্টল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ দিকেই। প্যাভিলিয়নের কাজও দৃশ্যমান।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিম পাশে স্টল রঙ করার কাজ করছিলেন কয়েকজন রঙমিস্ত্রী। তাদের মধ্যেই একজন মামুন। তিনি বার্তা ২৪.কমকে জানান, জানুয়ারির মধ্যেই কাজ শেষ করে ফেলতে পারব। আমরা মিজান পাবলিশার্স এর স্টল রং করা আর ডিজাইনের কাজ করতেছি এখন। যার যার স্টল তার তার দায়িত্ব রঙ করার।
জানা যায়, বই মেলা উপলক্ষে প্রকাশকদের মাঝে ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে স্টল বরাদ্দের লটারি আগামী ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এবং ৩০ জানুয়ারি সকাল ১১টায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে মেলার সার্বিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাসব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। এ বছর যেহেতু অধিবর্ষ তাই মেলা চলবে ফেব্রুয়ারি মাসের ২৯ তারিখ পর্যন্ত।
এদিকে মেলার আয়োজনে এবার কিছু পরিবর্তন আনছে বাংলা একাডেমি। ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যেগে মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনাসহ মেলা পরিচালনা করত। পরবর্তীতে মেলার পরিসর বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর মাধ্যমে সব কাঠামোসহ অন্যান্য কিছু অংশ সম্পন্ন করা হতো। তবে বিভিন্ন সময়ে তাদের অসহযোগিতা ও সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার পুরো মেলার দায়িত্ব বাংলা একাডেমি একাই সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ এর আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, বাংলা একাডেমি এবার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সম্পূর্ণ বই মেলা আয়োজন করছে। কোনো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থাকবে না, কারণ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কারণে বাংলা একাডেমির নীতি নির্ধারকদের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে পুরো মেলার নিরাপত্তার স্বার্থে টিনের নিরাপত্তা বেষ্টনির কাজ প্রায় শেষ দিকে। এছাড়া মেলার নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা, আর্চওয়ে, বাংলা একাডেমি স্টল, বাংলা একাডেমি প্যাভিলিয়ন, তথ্যকেন্দ্র , মোড়ক উন্মোচন ও লেখক বলছি মঞ্চের ইন্টেরিয়র কাজ সম্পন্নের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে । ফলে কিছু কিছু কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এছাড়াও আগামী ২৩ জানুয়ারি বিগত বছর এবং নতুন প্রাপ্ত প্রকাশকদের মাঝে স্টল বরাদ্দের লটারি অনুষ্ঠিত হবে।
মেলা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এবার বাড়তে পারে কিছু স্টলের সংখ্যা। এবার নতুন কিছু স্টলের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল বাংলা একাডেমি। এতে আবেদন করেছে ৭৭ টি প্রকাশনী, তবে সেখান থেকে বাছাই করে কয়টি নতুন স্টল রাখা হবে সে সংখ্যাটি এখনও চূড়ান্ত নয়।
গতবারের বইমেলার বিন্যাস সকলেই পছন্দ করেছিলো বলে এবারও বইমেলার বিন্যাস ও কাঠামো আগের মতই থাকবে। স্টল ও প্যাভিলিয়নের জন্য আলাদা সারি করা হবে। মেলা যাতে শুধু মাত্র টিএসসির গেট কেন্দ্রিক না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই স্টলগুলো সাজানোর পরিকল্পনা করেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মেলার প্রবেশ গেটে নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও খাবারের দিকেও বিশেষ নজর দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
সার্বিক বিষয়ে বইমেলা আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, এ বছর যেহেতু অধিবর্ষ তাই ২৯ তারিখে মেলা শেষ হবে। এবার মেলার বিন্যাস ও কাঠামো আগের মতই থাকবে। গতবার যে বিন্যাসটি ছিলো সেটি সর্বমহলে প্রশংসিত ছিলো।
মেলার আয়োজনটাকে আরও বেশি গোছালো করতেই আমাদের চেষ্টা।