টিকে থাকার সক্ষমতাও কেন নেই টেলিটকের

, জাতীয়

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-01-21 22:45:13

রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক ২০০৫ সালে যখন যাত্রা শুরু করে, তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে এই কোম্পানিটির একটি সিম ছিল সোনার হরিণের মতো। টেলিটকের সিমে অন্য যেকোনো অপারেটরের চেয়ে কম টাকায় কথা বলা সম্ভব ছিল। সাথে প্রি-প্রেইড সিমের দাম ছিল মাত্র তিন হাজার টাকা। সেই সময়ে অন্য মোবাইল অপারেটরের দামও ছিল অনেক বেশি।

সবমিলিয়ে টেলিটকের একটি সিম পেতে টেলিটকের বিক্রয় কেন্দ্রে থাকতো উপচে পড়া ভিড়, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও এই সিম পাওয়া ছিল দু:সাধ্য।

যে আশা নিয়ে অপারেটরটি যাত্রা শুরু করেছিল, তা অচিরেই নিরাশায় পরিণত হয়। যত সময় গড়িয়েছে ততই টেলিটকের অবস্থা খারাপ হয়েছে। আর তাইতো ১৮ বছরেও এটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারেনি।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযেগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) তথ্য বলছে, চারটি মোবাইল অপারেটরের মধ্যে ৬৪ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক নিয়ে সবচেয়ে তলানিতে রয়েছে টেলিটকের অবস্থান। যেখানে গ্রামীণফোন ৮ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার, রবি ৫ কোটি ৮৩ লাখ ৮০ হাজার, বাংলালিংক ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। দেশে মোট গ্রাহক সংখ্যার ৪ শতাংশের কম গ্রাহক রয়েছে টেলিটকের।

সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানে টেলিটকের সিম ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি, চাকরির আবেদনের ফি, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফি টেলিটকের মাধ্যমে জমা দিতে হয়।

কম দামে ভালো অফার এবং শিক্ষার্থীদের জন্যও আকর্ষণীয় অফার দেওয়া হয়। এসবের পরেও গ্রাহক আকর্ষণ করতে পারছে না টেলিটক। বরং উল্টো গ্রাহক কমছে।

১৮ বছরেও কেন লোকসানের বৃত্ত থেকে বের হতে পারলো না, সেই প্রশ্নের উত্তরও নেই কারো কাছে। যখনই কেউ নতুন মন্ত্রী হিসেবে আসেন তখন টেলিটকে লাভে আনার কথা বলেন, ঘুরে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেন। দু’দিন পরে সেই অঙ্গীকার আর থাকে না। প্রতিষ্ঠানটি যেখানে ছিল সেখানেই থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো অবদমনও ঘটে।

সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েই মন্ত্রণালয়ে বসে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যযোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক টেলিটকসহ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সব প্রতিষ্ঠানসমূহকে ৩০ জুনের মধ্যে লাভে আনার নির্দেশনা দেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই সময়ের মধ্যে লোকসানি প্রতিষ্ঠানসমূহ লাভে না এলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টেলিযোগাযোগ বিভাগের কোনো কোম্পানি লোকসানে থাকতে পারবে না।

অন্যান্য মন্ত্রীদের তুলনায় প্রতিমন্ত্রীর ঘোষণাটি ব্যতিক্রমী ছিল। জুনায়েদ আহমেদ পলক টেলিটককে লাভে আসার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট একটি ডেডলাইন দিয়ে দিয়েছেন।

টেলিটকের ব্যবসার মূল ভিত্তি রাষ্ট্রীয় সুযোগ ও সুবিধা। গ্রাহকদের উন্নত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এখন অসংখ্য অভিযোগ গ্রাহকদের।

এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির দেনার পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে দুইবার শুধু লাভের মুখ দেখেছিল। সরকারের কাছেই দেনা আছে দুই হাজার কোটি টাকা। বিটিআরসি পাওনা আছে একই পরিমাণ অর্থ। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কাছে দেনা ৩৮৯ কোটি টাকার বেশি। এর বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও ঋণ প্রদানকারীদের কাছে ঋণের পরিমাণ ৩৬০ কোটি টাকা। দেনার বিপরীতে টেলিটক পাওনা ১৪১ কোটি টাকা।

সম্প্রতি সরকারের রাজস্ব বিভাগ টেলিটককে সব সরকারি দেনা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যেভাবে দেনায় টেলিটক ডুবে আছে, তাতে তাদের টিকে থাকার সক্ষমতাও নাই। বর্তমান আর্থিক অবস্থায় তাদের পক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেনা পরিশোধ করা সম্ভব নয়। দিন শেষে হয়তো সরকারকেই এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

বেসরকারি খাতে একচেটিয়া ব্যবসা রোধ করা ও বাজারে বৈষম্য কমাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের কল্যাণে সেবা দিয়ে থাকে। এই দুটি কারণেই মূলত এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখা হয়। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অদক্ষ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের জন্য বোঝা ছাড়া অন্য কিছু নয়। বরং এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সুবিধাভোগী কিছু আমলা, যারা এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে থাকেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর