‘যে প্রশাসন ধর্ষকদের পাহারা দেয়, সেই প্রশাসন চাই না’

, জাতীয়

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-02-07 01:38:07

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গণধর্ষণের প্রতিবাদে মীর মশাররফ হোসেন হল ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট এবং হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে আসা পলায়নে সাহায্য করার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠনসহ ৪ দফা দাবি নিয়ে মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্ত্বর থেকে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার, টারজান পয়েন্ট ও সকল ছাত্রী হল হয়ে পুনরায় ট্রান্সপোর্ট চত্ত্বরে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

শিক্ষার্থীদের উথাপিত দাবিসমুহ হল, ধর্ষণে অভিযুক্ত ও পলায়নে সহযোগিতাকারীদের রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার দ্রুততম সময়ে নিশ্চিত করতে হবে, মীর মশাররফ হোসেন হল ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট এবং হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে, সকল আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের তাড়াতে হবে, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা শাখার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে।

এসময় শিক্ষার্থীদের, ‘ছাত্রলীগ ধর্ষণ করে, প্রশাসন কি করে’, ‘ধর্ষকদের পাহারাদার, হল প্রশাসন চমৎকার’, ‘However I dress, wherever I go, yes means yes, no means no’, ‘ধর্ষকদের পাহারাদার, ধিক্কার ধিক্কার’, ‘যে প্রশাসন ধর্ষকদের পাহারা দেয়, সেই প্রশাসন চাই না’, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে আমরাই থাকবো, অছাত্ররা থাকবে না’, ‘জাহাঙ্গীরনগরের মাটিতে, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘হল থেকে দল থেকে, ধর্ষকদের বহিষ্কার করো’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

এরপর মিছিল শেষে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইজা মেহজাবিন প্রিয়ন্তীর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রাবেয়া বসরী তাপস্বী বলেন, ‘সেঞ্চুরি মানিক থেকে মোস্তাফিজ পর্যন্ত যে ঘটনা ঘটে গেছে সেটা বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। একটা নির্দিষ্ট দল এই সব ঘটনার সাথে যুক্ত সে বিষয়ে আমরা সবাই অবগত আছি। কিন্তু প্রশাসন কখনো উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা করে না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সকলের জন্য নিরাপদ হোক। বহিরাগত বলে আমরা যাদের ট্যাগ দিয়েছি, যাদের টাকায় আমাদের ক্যাম্পাস চলে তাদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হোক।’

আইআইটি বিভাগের শিক্ষার্থী সোয়াতি বলেন,‘বঙ্গবন্ধু কিন্তু ইঞ্জাস্টিসের কথা কখনো বলেন নি। আর ছাত্রলীগ যদি ন্যায়ের পক্ষে থাকে তবে ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার সাথে সাথেই তাদের হল ছেড়ে দেয়া উচিত। ছাত্রলীগ সুস্থ্য নেতৃত্বের বদলে অসুস্থ্য নেতৃত্ব তৈরি করছে। আমি চাবো এই বিষয়ে তারা কাজ করুক।'

সমাপনী বক্তব্যে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী অনামিকা নূরাইন বিত্ত বলেন, 'ঘুরেফিরে কেন ছাত্রলীগের কর্মীরাই ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে অপকর্ম গুলো ঘটায়। আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, ধর্ষণ একটি পাওয়ার প্র্যাকটিস। ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে সবচেয়ে বেশি পাওয়ার প্র্যাকটিস করে। ছাত্রলীগের কর্মীদের ক্যাম্পাসে শিখানো হয় কিভাবে বাপ মা ছেড়ে আসা একজন শিক্ষার্থীকে কিভাবে টর্চার করতে হয়। সেখান থেকে তারা ক্ষমতার স্বাদ পায়। এবার রেপ হয়েছে পরবর্তীতে হবে রেপ অ্যান্ড মার্ডার। আমাদের দাবিগুলো প্রশাসনের মানতে হবে, অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত করা, সার্টিফিকেট সাময়িক স্থগিত করার এই প্রহসন বন্ধ করতে হবে। সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।’

এরপর আগামীকাল দুপুর ১:০০ টায় শহীদ মিনারের পাদদেশে কালো পতাকা মিছিলের ঘোষণা দিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ আবাসিক হলের ৩১৭ নং কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে কৌশলে মীর মশাররফ হোসেন হলের পেছনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত মামুনুর রশীদ মামুন।

পরে অভিযুক্ত মোস্তাফিজকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের হাসানুজ্জামান (৪৫তম ব্যাচ), সাগর সিদ্দিকী (৪৬ ব্যাচ) এবং বোটানি বিভাগের সাব্বির হোসেন (৪৭ ব্যাচ)। এরা ৩ জনই ছাত্রলীগের কর্মী ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী। এদের মধ্যে সাগর সিদ্দিকী ছাত্রলীগের হল কমিটিতে সভাপতি পদ প্রত্যাশি ছিল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর