জাতীয় নির্বাচনের আগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী। তাই নির্বাচন পরবর্তীতে আবারও সংগঠিত হতে চেষ্টা করছেন তারা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, তাদের এই অপতৎপরতা উত্তরবঙ্গ কেন্দ্রিক আর তারা অবস্থান করছেন দুর্গম জনশূন্য এলাকায়। হঠাৎ নির্দিষ্ট এলাকা কেন্দ্রিক জঙ্গিদের অপতৎপরতার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের।
তবে র্যাব- পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিদের ওপরে কড়া নজরদারি আছে সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর।
র্যাব সদরদফতরের তথ্য বলছে, হলি আর্টিজেনের ঘটনার পর থেকে শুধু র্যাব বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের প্রায় ৫৫০ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছেন ২৫ জনের বেশি। আত্মসমর্পণ করেছেন ১০ জন।
তাছাড়া গত ছয় মাসে ১৩০ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। যেখানে শুধু জেএমবি সদস্যই রয়েছে ৯৯ জন।
তবে সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গঠিত র্যাব ও পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট গুলো অন্তত ১০টি আস্তানায় হানা দিয়ে বিভিন্ন স্তরের ২২ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে।
সর্বশেষ রোববার (৭ জানুয়ারি) রংপুরের তারাগঞ্জ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির উত্তরবঙ্গের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ আবদুর রহমান বিশ্বাসসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব ১৩।
র্যাব সদরদফতর সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত প্রধান সমন্বয়ক আব্দুর রহমান বিশ্বাস, জেএমবির আধ্যাত্মিক নেতা আবুল কাশেমের ছেলে। আবুল কাশেম কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট কর্তৃক ২০১৭ সালের মার্চে মিরপুর থেকে গ্রেফতার হলে উত্তরবঙ্গের জঙ্গি সংগঠনের হাল ধরেন তার ছেলে।
জানা যায়, তিনি মূলত উত্তরবঙ্গে জেএমবি কার্যক্রম পরিচালনা, নাশকতা পরিকল্পনায় মূল ব্যক্তি হিসেবে সহায়তা করে থাকেন।
জঙ্গিদের উত্তরবঙ্গের সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গা রাখতে, বিভিন্ন লোকজনদেরকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অর্থ সাহায্য নিতেন তারা। যা দিয়ে তারা সংগঠন পরিচালনা করাসহ অস্ত্রশস্ত্র কিনতেন।
পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, নতুন সদস্য সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য পরিকল্পনা কাজে টাকা ব্যায় করতেন।
উত্তরবঙ্গ ভিত্তিক এই জঙ্গি সংগঠনের পরিকল্পনা, শুধু উত্তরবঙ্গ কেন্দ্রিক নয়। দেশজুড়ে নানা ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করতেন তারা। বিশেষ করে বিভিন্ন এনজিও থেকে অর্থ ছিনতাই, ইসলাম বিরোধী কথা বার্তা প্রচার করা ব্যক্তিদের হত্যা করা ছিল তাদের মূল পরিকল্পনার অংশ।
নির্বাচন পরবর্তীতে জঙ্গিদের এই অপতৎপরতাকে কিভাবে দেখছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা, জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত আব্দুর রশিদ বার্তা২৪কে বলেন, শুধু জঙ্গি সংগঠন না। নির্বাচনের আগে ও পরে যে কোনো অপশক্তি তৎপর হয়ে ওঠে। যখন কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জঙ্গিদের মতাদর্শ মিলে যায়। তখন নির্বাচনের সময় বা নির্বাচন পরবর্তীতে জঙ্গিদের ওই দলটির উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে কার্যক্রম চালায়। ফলে তাদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পায়।
উত্তরবঙ্গ কেন্দ্রিক জঙ্গিদের অপতৎপরতার ও তাদের সক্ষমতার বিষয়ে জানতে চাইলে, র্যাব ১৩'র প্রধান মোজাম্মেল হক বার্তা২৪কে বলেন, দুইদিন আগে আটক হওয়া জঙ্গিদের কাছ থেকে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও অন্য সহযোগীদের নাম জানতে পেরেছি।
নাশকতার পরিকল্পনা, সরকার ও রাষ্ট্র বিরোধী পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তারা। এই ধরনের পরিকল্পনা সঙ্গে আর যারা যারা জড়িত আছে অতি দ্রুত তাদেরকে আমরা গ্রেফতার করব।
মোজাম্মেল হক বলেন, উত্তরবঙ্গের জঙ্গিদের বর্তমান প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে ছিলেন আব্দুর রহমান বিশ্বাস। তাকে আটক করা সম্ভব হয়েছে, সেক্ষেত্রে অন্যদের কেউ আটক করে যাবে।