কার্যকারিতা নেই রাজধানীর ১২১টি বাস স্টপেজের

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-11 12:45:47

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীতে ১২১টি বাস স্টপেজ চিহ্নিত করে। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ডিএমপির এক নির্দেশনায় বলা হয় স্টপেজগুলো ছাড়া বাস থামানো বা যাত্রী ওঠানামা করানো যাবে না। পরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ১২১টি স্টপেজে যাত্রীছাউনি নির্মাণ ও সাইনবোর্ড বসানো হয়। কিন্তু ৫ মাসের মাথায় সব অকার্যকর। কাগজে কলমে বাস স্টপেজগুলো থাকলেও কার্যকারীতার দিক থেকে স্টপেজের দেখা মেলে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্ধারিত বাস স্টপেজগুলোতে যাত্রীরা দাঁড়ান না, ফলে বাসও সেখানে দাঁড়ায় না। আগের মতোই যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো হচ্ছে। রাজধানীর সড়কে চলছে আগে যাওয়ার অসম প্রতীযোগীতাও। ফলে ৯০ শতাংশ যাত্রী স্টপেজে অপেক্ষা না করে খুশিমতো সড়কের বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়ান। চালকরাও যাত্রী টানতে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী তোলেন। আর যে ১০ শতাংশ যাত্রী স্টপেজে অপেক্ষা করেন, তারা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও বাসে জায়গা পান না। ফলে অকার্যকর হয়ে পড়েছে রাজধানীর ১২১টি বাস স্টপেজ।

গত মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি, শুক্রাবাদ, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, বাংলামোটর, শ্যামলী বাস স্টপেজ, মিরপুরের এশিয়া সিনেমা হলের সামনে ও খিলগাঁয়ের অতীশ দীপঙ্কর রোডের বাস স্টপেজ ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

এদিকে, স্টপেজ অকার্যকর হওয়ার জন্য একে অন্যকে দুষছেন যাত্রী ও চালকরা। যাত্রীদের অভিযোগ, চালকরা বাস স্টপেজে দাঁড়াতে চান না। ফলে গাড়িতে উঠতে তাদের সুবিধাজনক জায়গায় দাঁড়াতে হয়। আর চালকদের অভিযোগ, যাত্রীরাই নির্দিষ্ট স্টপেজে দাঁড়ান না, এমনকি সড়কের যত্রতত্র নমতে চান। তাদের সুবিধা মতো স্থানে না নামালে মারধরও করেন। তাই যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করাতে হয়।

মো. সোহেল চৌধুরী প্রতিদিন বাংলামোটর থেকে মতিঝিলে অফিসে যান। তিনি বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘প্রথম যখন ডিএমপির নির্ধারিত বস স্টপেজ হয় বাংলামোটরে, তখন প্রথমদিন থেকেই স্টপেজেই দাঁড়াতাম। কিন্তু ৩০ মিনিট দাঁড়ানোর পরও কোনো বাসে উঠতে পারতাম না। চালকরা আগের মতোই সিগন্যালের সামনে এসে যাত্রী ওঠানামা করাতো। তাই এখন আর স্টপেজে দাঁড়ায় না।’

এই রোড দিয়ে চলাচলকারী ওয়েলকাম বাসের চালক রেজাউল বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘যাত্রীরা যেখানে দাঁড়ান আমরা সেখানেই বাস থামায়। যাত্রীরা যদি স্টপেজে না দাঁড়ান তাহলে কী করব? যাত্রীরা স্টপেজে দাঁড়ালে আমরাও যাব।’

তবে চালক যাত্রীদের বাস স্টপেজ ব্যবহারে বাধ্য করানোর বিষয়ে বেশ উদাসীন মনে হয় ট্রাফিক বিভাগকে। ডিএমপির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সোমবার (৭ জানুয়ারি) রাজধানীতে ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে ৪ হাজার ১০৩টি মামলা ও ২৩ লাখ ১৪ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। যার মধ্যে একটিও স্টপেজে বাস না থামানোর দায়ে করা হয়নি।

এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশের আইন প্রয়োগের গাফিলতির কারণে স্টপেজে বাস থামানোর বিষয়ে উদাসীন চালকরা। মাঝে মধ্যে আন্দোলন হলে আইনের প্রয়োগ কড়াকড়ি হয়। কিন্তু দুইদিন পর সেই আগের অবস্থা। তাই যাত্রী ও চালকদের স্টপেজে সীমাবদ্ধ রাখার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের।’

খিলগাঁয়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আনোয়ার কবির বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘মমলা হয় না এই তথ্য সত্য নয়। নির্ধারিত স্থানে না থামার কারণে শত শত মামলা করি। তার পরেও যাত্রী বা চালক কেউই আইন মানেন না।’

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাস কোম্পানির মালিকদের সঙ্গে আলোচনা না করলে স্টপেজে বাস থামানো যাবে না। এছাড়া একই রোডে বিভিন্ন কোম্পানির বাস থাকলে প্রতিযোগীতা বেশি হবে। ফলে কার আগে কে যাত্রী নিবে সেই প্রতিযোগীতা ঠিক রাখতে চালকদের মাথায় স্টপেজের ধারণা থাকে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর