‘সোনার হরিণ’ ধরতে বন্দিজীবনে

, জাতীয়

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মেহেরপুর | 2024-02-12 16:22:37

‘সোনার হরিণ’ ধরতে বিদেশ যেতে দালাল চক্রের হাতে প্রতারিত হচ্ছেন মেহেরপুরের হাজারো মানুষ। বিদেশে গিয়ে কাজ পাচ্ছেন না, উপরন্তু ঘরে বন্দি অবস্থায় মানবেতর দিনযাপন করতে হচ্ছে অনেকের। ঘটনার দায় এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন স্থানীয় দালালরাও। এদিকে, প্রবাসে স্বজনদের মানবেতর জীবন সত্ত্বেও স্থানীয় দালালদের সঙ্গে কোনোরূপ চুক্তি না থাকায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলোও নিতে পারছে না আইনের আশ্রয়।

জানা গেছে, সম্প্রতি মালয়েশিয়া গিয়ে ঘরে বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন জেলার বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ২৩৮ জন। মোছা. কলিম এন্টারপ্রাইজের নামের একটি রিক্রুটিং এজেন্সি তাদেরকে একটি কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ দেওয়া কথা বলে নিয়ে যায়। মালয়েশিয়ার বাগান, তেরাশ ও সালাক সালাকা শহরে তাদেরকে রাখা হয়। প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও তারা কাঙ্ক্ষিত কোন কোম্পানিতে কাজ না পেয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। পাসপোর্ট ভিসা ইমিগ্রেশনে আটকে থাকায় বাইরেও বের হতে পারছেন না তারা।

মালয়েশিয়ায় আটকে থাকা ২৩৮ জনের মধ্যে গাংনীর কাজিপুর গ্রামের বাপ্পি রানা, জুলহাসুর রহমান, তরিকুল ইসলাম মিলন ও রজন জানান, মূল কোম্পানির নামে কাগজপত্র তৈরি করা হলেও তাদেরকে কোন কাজ দেওয়া হয়নি। মালয়েশিয়ায় চার মাস ধরে একটি ঘরে বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। বিদেশ যেতে জনপ্রতি খরচ হয়েছে ৫ লাখ টাকারও বেশি। কোম্পানিতে কাজ হবে এমন আশ্বাসে আদম বেপারীরা তাদেরকে দিনের পর দিন আটকে রেখেছে।

দেশে থাকা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সদস্যরা জানান, ভিটেমাটি বিক্রি এবং ধার-দেনা করে তাদেরকে বিদেশ পাঠানো হয়। পরিবারের লোকজনের পক্ষে এখন টাকা খরচ করে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

এরআগে, আবুল নামের এক দালালের খপ্পরে পড়ে সৌদি আরব গিয়ে এমনই বন্দিদশায় থাকতে হয়েছে গাংনীর আরও কয়েকজনের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় কিছু দালাল অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভ্রমণ ভিসায় মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠায়। সেখানে পৌঁছার পর তিন মাসের মধ্যে অনেকে শ্রমিক হিসেবে কাজের অনুমোদন পায়। কাজের অনুমোদন প্রক্রিয়ার মধ্যে তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর অনেকেই অবৈধ অবস্থানের বিধিনিষেধে পড়ে যায়। ফলে বৈধভাবে বাড়ি ফেরার সুযোগ থাকে না। জীবন চালাতে অনেকে গোপনে কাজ খোঁজার চেষ্টা করে আবার কেউ কেউ গ্রেফতার হয়ে কারাবাসের পর বাড়ি ফেরে নিঃস্ব হয়ে। শ্রমিক হিসেবে বিদেশ যাওয়ার কোন বৈধ চুক্তিপত্র না থাকায় পরিবারের পক্ষ থেকে মানবপাচার আইনে মামলা করার সুযোগও থাকে না।

আটকেপড়াদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকারিভাবে চেষ্টার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রিতম সাহা। তবে যথাযথ আইনগত সহায়তা পেতে আইন মেনে বিদেশগামী চুক্তি সম্পাদনের পরামর্শ দেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর