ঠাকুরগাঁওয়ে ইটভাটায় উজাড় হচ্ছে গাছ, কৃষিও হুমকিতে

, জাতীয়

সেন্ট্রাল ডেস্ক ২ | 2023-08-17 07:44:50

ইটভাটা গ্রাস করছে ঠাকুরগাঁওকে। ইট পোড়াতে প্রভাবশালী ভাটা মালিকরা একদিকে যেমন উজাড় করছেন গাছ অন্যদিকে নগদ অর্থের লোভ দেখিয়ে এবং কখনো কখনো হুমকি দিয়ে কেটে নিচ্ছেন কৃষকের উর্বর ফসলি জমির উপরিভাগের মাটির। এতে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়ছে ফসল উৎপাদন। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। প্রতিদিন একেকটি ভাটার খোরাক হচ্ছে কয়েক হাজার মণ কাঠ। দিনে-রাতে সরকারি-বেসরকারি গাছ কেটে ভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভাটায় কাঠ পোড়ানোর নিষেধ থাকলেও মানছেন না ভাটা মালিকরা। তারা নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে কাঠ পোড়াচ্ছেন। ভাটায় পোড়ানোর জন্য কাটা গাছ ভাটার পাশে না রেখে দূরে রাখছেন। রাতের অন্ধকারে ট্রলিতে করে সেগুলো ভাটায় নিয়ে পোড়ানো হচ্ছে। এভাবেই গাছ উজাড় করছেন ভাটা মালিকরা। অপরদিকে, বাংলাদেশের তিন ভাগের একভাগ গম উৎপাদন হয় ঠাকুরগাঁও জেলায়। এছাড়াও এখানে ধান, আলু ও আখের উৎপাদনও উল্লেখযোগ্য। মুন্সিগঞ্জ ও রংপুরের পরেই আলু উৎপাদনের স্থান ঠাকুরগাঁওয়ের। কিন্তু ভাটা মালিকরা টাকা-পয়সার লোভ দেখিয়ে, আবার কখনো হুমকি দিয়ে ইটভাটার জন্য মাটির উপরের অংশ (টপসয়েল) কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। এভাবে কৃষি ফসলি ধানী জমি ও ফলের বাগান ধ্বংস করে যারা ইটভাটা নির্মাণ করছে তাদের বিরুদ্ধে  ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। তাদের ভাষ্য, এখনই এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে এ জেলার কৃষি। বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের কৃষক বজির উদ্দীন অভিযোগ করেন, তার তিন বিঘা আবাদি জমির তিন পাশেই আইল (সীমানা) বরাবর চার-পাঁচ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। ফলে ওই জমিতে এখন পানি থাকে না। আবাদ করতে সমস্যা হচ্ছে। অন্যদিকে, স্কুলসংলগ্ন হওয়া সত্ত্বেও রহস্যজনক কারণে পরিবেশের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে অনেক মালিককে। কিছু ভাটা মালিক স্কুলমাঠসংলগ্ন জমি কেটে খাল বানিয়ে ফেলেছে। জেলা প্রশাসন আগে এসব দেখভাল করলেও এখন ভাটা মালিকরা হাইকোর্টে রিট করার কারণে আগের মতো আর তাদেরও কোনো তদারকি নেই। এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোছা. দেলোয়ারা বেগম জানান, একটু বাতাস বইলেই ভাটার ছাইয়ে শিশুদের পোশাক, বইপুস্তক কালো হয়ে যায়। এতে লেখাপড়ায় মনোযোগ হারাচ্ছে তারা। প্রতিদিন স্কুলের চেয়ার-বেঞ্চ ঝাড়ু দিতে হয়। কিন্তু আমরা ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাই না। ভাটার ছাইয়ে শিশুদের কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. খায়রুল কবির জানান, শিশুদের শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমাসহ নানা রকম রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের নাজির জর্জেসুর রহমান জানান, হাইকোর্টে রিট করে মালিকরা ভাটাগুলো চালাচ্ছে। বর্তমানে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে ভাটার তথ্য নেই। ভাটা মালিকরা আগের মতো আমাদের সঙ্গে সম্পর্কও রাখেন না। ঠাকুরগাঁও ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ঠিকাদার মুরাদ হোসেন জানান, এ জেলায় বর্তমানে ভাটার সংখ্যা ৮০টি। এর মধ্যে ৩টি নতুন ভাটার কাজ চলছে, ২৬টি ঝিঁকঝাঁক (হাওয়া) ও বাকিগুলো ফিক্স চিমনি ভাটা। তিনি বলেন, এ বছর তুলনামূলকভাবে খড়ি কম পোড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে সমিতি থেকে ভাটা মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, জেলায় এখন কোনো ড্রাম চিমনি ইটভাটা নেই। এ ইটভাটা যেমন নির্মূল হয়েছে তেমনি খড়ি পোড়ানো ভাটাও নির্মূল করা হবে। আমরা আরো নজরদারি বাড়াবো যাতে ভাটায় কেউ কাঠ পোড়াতে না পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর