ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে ৬ দিনব্যাপী অমর একুশে বইমেলা। লেখক, পাঠক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, কবি ও সুশীল সমাজ, দর্শনার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ এবং সরব উপস্থিতিতে জমে উঠেছে মেলা।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড়। স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতিতে জমজমাট বেচাকেনা চলছে মেলায়। তবে সন্ধ্যার পর মেলায় ভিড় আরও বেড়ে যায়। মেলা উপলক্ষ্যে শহীদ বেদিতে চলছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বই কেনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে ভিড় করে সাধারণ মানুষ।
অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়েও মেলায় ঢুঁ মারছেন। মেলায় বিভিন্ন স্টলে গিয়ে দেখা যায় উৎসুক পাঠকরা। অনেকেই দল বেঁধে বইমেলায় এসেছেন। কেউ কেউ বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে, কেউবা পরিবার পরিজন, প্রিয় মানুষকে নিয়ে। শিশু, কিশোর-কিশোরীরাও এসেছে। মেলায় আগতরা ঘুরে ঘুরে দেখছেন নিজের প্রিয় লেখকদেরসহ মেলায় আসা নতুন বইগুলো। এ স্টল থেকে ওই স্টলে ঘোরাঘুরিতে কাটিয়ে দিচ্ছে সময়। পছন্দমতো বইও কিনছে। অনেকে আবার দল বেঁধে এসে বিভিন্ন স্টল ঘুরে চলে যাচ্ছেন, কেউবা আবার বইয়ের পাতা উল্টে দেখছেন। আবার অনেকে বই কিনে প্রিয় মানুষদের উপহার দিচ্ছেন।
বইমেলায় আসা স্কুল শিক্ষক নুরুল আফছার বলেন, দিনের বেলা সুযোগ পাই না। সন্ধ্যা নামলেই বইমেলায় চলে আসি। স্টলে স্টলে ঘুরি আর বই কিনি। ফেনীর মানুষ বইমেলার দাবি এজন্যই জানিয়েছিল, কারণ এখানে সাহিত্যের চর্চা আছে। বই পড়ার প্রতি আগ্রহ আছে। আর একটা মেলা হলে যে বই পড়েনা তারও পড়ার ইচ্ছা জাগ্রত হয়। এমন মেলা সবসময় আয়োজন করা উচিত।
স্কুল শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার বলেন, বই মেলায় আসার একটি আনন্দ আছে। অনেক মেলায় তো যাওয়া হয়, তবে বইমেলা আলাদা। এখানে আসলে সময়টা এমনিতেই ভালো যায়। দুই একটি বই কিনেছি শেষ দিন আরও কিনব।
গ্রন্থকুটির স্টল এর মনোজ পাল জানান, বই বিক্রি বেড়েছে। এমনকি গত দুইদিনের চেয়ে ভালো বিক্রি হচ্ছে। কোহিনুর লাইব্রেরির হোসেন মজুমদার বলেন, বেচা বিক্রি ভালো হচ্ছে। পাঠক আসছে এবং বই নিচ্ছে।
ভাটিয়াল প্রকাশনীর আলমগীর মাসুদ বলেন, ফেনীতে বইমেলা হচ্ছে এটাই আনন্দের। পাঠক ও সাংস্কৃতিকজনদের কাছে এ মেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাঠক এখানে এসে বই দেখেন, বই ক্রয় করেন। এ বই মেলা প্রতিবছর যেন ১৫ দিনব্যাপী আয়োজন করা হয়।
ঢাকা থেকে আসা সাহিত্যদেশ এর মিল্লাত আল জিসাদ বলেন, ফেনীতে বই পড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। ঢাকাতে অনেকে শুধু ছবি তুলে। এখানে ছবি তোলার চেয়ে পাঠক বেশি। এটা দেখে আমার ভালো লাগছে এবং বিক্রিও ভালো হচ্ছে।
মেলায় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে স্টল দিয়েছেন পৌর এলাকার কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংগঠন। মেলার বিষয়ে সংগঠনের একজন সাংবাদিক সুরঞ্জিত নাগ জানান, মেলায় যা বিক্রি হয় তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তরুণ প্রজন্ম বইকে ভালোবাসছে। বইকে সানন্দে গ্রহণ করছে। মানুষজন বইকে ভালোবেসে মেলায় আসছেঅ এটাই মেলা আয়োজনের সফলতা। প্রাণের বই মেলা প্রতিবছর আয়োজন হোক, এটি ফেনীবাসীর প্রাণের দাবি।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর ফেনী প্রতিনিধি এবং দৈনিক ফেনী সম্পাদক লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক আরিফুল আমিন রিজভী বলেন, ফেনীর অনেক গুণী মানুষ ভাষা আন্দোলনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। তার মধ্যে ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম অন্যতম। সে জেলায় বইমেলা আয়োজন ছিল সময়ের দাবি। এবারের মেলা অনিশ্চিত ছিল কিন্তু পৌর মেয়রের আন্তরিকতায় এ মেলা আয়োজিত হয়েছে এবং ফেনীর মানুষ খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। ৩ দিনের মধ্যেই বেচাবিক্রি দারুণ হচ্ছে এবং ফেনীতে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৬ দিনব্যাপী এই মেলা ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এবং আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত ৯ টা অবধি এ মেলা চলছে। মেলা উপলক্ষে প্রতিদিন চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে পবিত্র শবে বরাতের জন্য রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে।