'এই তোমার লাইসেন্স দাও'

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-19 06:39:14

সকাল ১১টা রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে চলছে বিআরটিএ‘র মোবাইল কোর্ট। রাজধানীতে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে বিআরটিএ নিয়মিত এ অভিযান পরিচালনা করছে।

এর ঠিক ১০ মিনিট পরেই সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মোবাইল কোর্ট পরিদর্শন করতে আসেন। মন্ত্রীর আগমনে সঙ্গে সঙ্গেই তৎপরতা বেড়ে যায় অভিযান কার্যক্রমের। এদিকে এতক্ষণে রাস্তার দুই পাশে উৎসুক জনতারও ভিড় বাড়তে থাকে।

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কিছুক্ষণ বিআরটিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নিজেই নেমে পড়েন অভিযানে। প্রথমে মন্ত্রী হাত উঠিয়ে কয়েকটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা থামিয়ে চালক ও যাত্রীদের জিজ্ঞাসা করেন 'মিটারে ভাড়া নেন?'। তখন চালক যাত্রীরা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলে মন্ত্রী তখন বলেন 'ঠিক আছে চলে যান'।

এরপর কিছুক্ষণ রাস্তায় হেঁটে মন্ত্রী এগিয়ে যান রাজধানীতে চলাচলকারী বাসের দিকে। এ সময় মন্ত্রীর পিছনে পিছনে ছুটেন বিআরটিএ‘ কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী ও উৎসুক জনতাও।

প্রথমে মন্ত্রীর নির্দেশে থামানো হয় ওয়েলকাম পরিবহনের একটি বাসকে। তখন মন্ত্রী বাসের কাছে গিয়ে চালককে গিয়ে বলেন, ',এই তোমার লাইসেন্স দাও'। চালক মন্ত্রীর হাতে লাইসেন্স দিলে তিনি তা নিজ হাতে চেক করেন। পরে লাইসেন্স সঠিক পাওয়ায় তিনি চালককে বলেন, 'ঠিক আছে তুমি যাও'।

এ সময় মন্ত্রী আরও বেশ কয়েকটি বাসের চালককে লাইসেন্স ও ফিটনেসের কাগজপত্র চেক করেন। এর মধ্যে দিশারী পরিবহন একটি বাসের সামনের গ্লাস ভাঙাসহ গাড়িটি ছিল জরাজীর্ণ। তাছাড়া ফিটনেস কপির মেয়াদও শেষ।

বাসের এই হাল দেখে সেতুমন্ত্রী চালককে জিজ্ঞাসা করেন, 'তোমার গাড়ির এ অবস্থা কেন?'। উত্তরে চালক মন্ত্রীকে বলেন, 'স্যার কাল রাতে একটা ট্রাক পিছন দিয়া মাইরা দিছিল তাই গ্লাস ভাইঙা গেছে, আজ ঠিক করামু।' তখন মন্ত্রী চালককে বলেন, ' মোবাইল কোর্ট থেকে জরিমানার স্লিপ নিয়ে যাও, আর যাত্রী নামিয়ে দিয়ে এসে গাড়ি নিয়ে আসবে, তোমার গাড়ি ডাম্পিং এ যাবে।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে এভাবেই সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রায় আধাঘণ্টা নিজে অভিযান পরিচালনা করেন।

অভিযান শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ফিটনেস নেই, জরাজীর্ণ গাড়ি ও মিটার বিহীন সিএনজির বিরুদ্ধে আজ সকাল ৯ টা থেকে দুইটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এ সময় মাত্র ২ ঘণ্টায় ৪২ টি মামলা হয়েছে। তারমধ্যে জেল হয়েছে ৩ জনের, গাড়ি জব্দ করা হয়েছে ৮টি ও জরিমানা হয়েছে ৯৭ হাজার টাকা। মাঝখানে নির্বাচন থাকায় বিআরটিএর অভিযান কিছু সময়ের জন্য স্থগিত ছিল। যে কারণে অনিয়ম বেড়ে গেছে। এ অভিযান নিয়মিত চলবে এখন থেকে।

তিনি বলেন, অভিযানে যে একবারে সাফল্য এসেছে তা না, আবার অভিযানে যে কিছু ইমপ্রুভমেন্ট হচ্ছে না তাও একেবারে বলা যাবে না। এই সমস্যার সমাধান একদিনে সম্ভব হবে না। আমাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করা দরকার, মেন্টাল কনস্ট্রাকশন টা আমাদের খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। কেউ আইন মানে না কেউই নিয়ম মানে না।

এ সময় তিনি যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, রাস্তা পারাপার হতে কি অবস্থার সৃষ্টি হয়, ছুটন্ত গাড়ির সামনে হঠাৎ ছোটাছুটি। আমাদের জনগণ ও রাস্তা পারাপারে কোনো ধরনের ট্রাফিক আইন মেনে চলেন না। তাই সে জন্য একটা ক্যাম্পেইন খুব দরকার। শুধুমাত্র আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না।

মালিকদের বিরুদ্ধে আপনারা কোনো অ্যাকশনে যাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, নতুন আইনে অনুযায়ী মালিক হোক বা চালক সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর