ইন্টারনেট মনিটরিংয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো সম্ভব?

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 10:21:06

 

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য শুধুমাত্র ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’ সম্প্রতি সময়ে সব থেকে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বেশ কয়েক বছর ধরেই এই মহামারিকে ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর কিছুটা সফলতা আসলেও এখনো শিক্ষাব্যবস্থার জন্য সব থেকে বড় হুমকি এই প্রশ্নপত্র ফাঁস।

আর এই হুমকিকে সামনে রেখেই আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় যেন প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয় তা এখন রীতিমত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন শিক্ষা মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর জন্য।

প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেছেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু তা মোকাবেলা করার জন্য আমরা প্রস্তুত।’

মন্ত্রীর এমন প্রত্যয়ের দৃশ্যমান কার্যক্রমও শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম শুরু করেছে।

ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন সূত্রে জানা গেছে, ইন্টারনেটে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে পরীক্ষার আগে ছড়ানো হয় প্রশ্নপত্র। তাই এসএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে ইন্টারনেট মনিটরিংয়ের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিশেষ কার্যক্রমে সাইবার ইউনিটের সঙ্গে ডিবি পুলিশও কাজ করে যাচ্ছে।

আরও জানা গেছে, ইতোমধ্যে সাইবার ইউনিট ও ডিবির সমন্বয়ে ১০টি টিম ভুয়া প্রশ্নপত্র জালিয়াতদের ধরার জন্য বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। অভ্যাসগত ও সন্দেহভাজন প্রশ্নপত্র জালিয়াতদের নিবিড়ভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে।
এছাড়া পরীক্ষার হলগুলোতে ম্যাগনেট, অপ্টিক ও ফ্রিকুয়েঞ্চি ডিটেক্টর বসানো হচ্ছে। যাতে হলে গিয়েও কেউ বিশেষ ডিভাইস দিয়ে জালিয়াতি করতে না পারে।

অপরদিকে ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন ম্যাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা জনপ্রিয় চ্যাট ইঞ্জিনগুলোর পাবলিক বা ক্লোজড গ্রুপে যারা প্রশ্ন সরবরাহ করবে বলে চটকদার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে তাদের ওপর নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছে। এন্টিটি বা কন্টেন্টগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীনও রয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির সাইবার সিকিরিউটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মো.নাজমুল হক বার্তা২৪কে বলেন, ‘আগামী মাসের শুরুর দিকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকদের আহ্বান জানাচ্ছি তারা যেন এই অনৈতিক কাজে না জড়ায়। প্রশ্নপত্র কোনোভাবেই ফাঁস হওয়ায় সুযোগ নাই। প্রশ্ন ফাঁস রোধে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’

তবে শুধুমাত্র ইন্টারনেটের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং করে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো সম্ভব না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ইন্টারনেট মনিটরিং প্রশ্নপত্র ফাঁসকে চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয়। ক্ষণস্থায়ীভাবে এর কিছুটা সফলতা পাওয়া গেলেও, তা যথেষ্ট হবে না।

তারা আরও বলছেন, শিক্ষা ব্যবস্থা, পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রশ্ন পদ্ধতি পরিবর্তন না করা গেলে কোনোভাবেই প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো সম্ভব নয়। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার জায়গায় বিচ্যুতি ঘটলে এ সমস্যা মোকাবিলা করা সহজ হবে না সরকারের পক্ষে।

এছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে প্রেস-প্রিন্টিংয়ের লোকজনের বিষয়েও নজরদারি বাড়তে হবে বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে ঢাবি ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বার্তা২৪কে বলেন, ‘গত বছরে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের হার কিছুটা কমেছে। বোঝা যাচ্ছে সরকার এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তবে শুধুমাত্র ইন্টারনেটে নজদারি চালিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এর জন্য আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন উঠিয়ে দিতে হবে, সৃজনশীলকে মানসম্মত করতে হবে ও একই প্রশ্ন বার বার ব্যবহার করা যাবে না। তাই নতুন সরকারের নতুন শিক্ষা মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর উচিত হবে প্রশ্ন পদ্ধতি, পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে শুরু করে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা। নাহলে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার মতো মহামারী ঠেকানো কষ্টকর।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর