নৈরাজ্যের সড়কে এবার শৃঙ্খলা ফিরবে কী?

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 02:46:23

নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশজুড়ে ছাত্র আন্দোলনের পরেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি। তবে পুলিশ দাবি করছে, ট্রাফিক সপ্তাহ এবং ট্রাফিক শৃঙ্খলা মাসের পর পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে অনেক অনুকূলে। এমন উন্নতির ধারাবাহিকতায় এবার ১৭ দিনব্যাপী ট্রাফিক শৃঙ্খলা কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়েছে।

এর ফলে নৈরাজ্যময় সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশা করছেন ট্রাফিক বিভাগ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।

এদিকে রাজধানীতে সরজমিনে দেখা যায়, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলছে দেদার। অনেক চালকের বেপরোয়া মনোভাব বন্ধ হয়নি। পাশাপাশি চুক্তিতে না চালিয়ে এখনো ট্রিপভিত্তিক চলছে গণপরিবহন।

গত বছর ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই কলেজ শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

সড়কে শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বলছিল, শিশুদের এই আন্দোলন তাদের চোখ খুলে দিয়েছে। সরকার সে সময় সড়কের নানা অনিয়ম বন্ধে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। ওই সব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে কাজও করে গেছেন তারা। তবে সেগুলো স্থায়ী হয়নি। ফলে মেলেনি কাঙ্খিত ফলাফল।

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ঢাকা মহানগর পুলিশও বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। যার বেশিরভাগই মামলা, জরিমানা, স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

সড়কের নৈরাজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আন্দোলনের সময় চালক, মালিক, সাধারণ মানুষ, সবাই আইন মানতে শুরু করেছিল। তখন সাময়িকভাবে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে এলেও বিপদ কেটে যাওয়ার পর আইন আর কেউই মেনে চলেনি। যার ফলে সড়কে নৈরাজ্য আবার ফিরে এসেছে।

জাতীয় নির্বাচনের পর আবারও ট্রাফিক শৃঙ্খলা আনতে ঢাকা মহানগর পুলিশ, ট্রাফিক বিভাগ মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রাফিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এ সময় জনসাধারণকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করা হবে।

ট্রাফিক শৃঙ্খলা উন্নয়নে যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে সেগুলো হলো-

১. ট্রাফিক সচেতনতামূলক লিফলেট, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও গাইড বই বিতরণ।

২. সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে নিয়ে ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনসমূহে ট্রাফিক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন।

৩. রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, গার্ল গাইড, বিএনসিসি সদস্যদের ট্রাফিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা।

৪. ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণের সঙ্গে সমন্বয় করে অবশিষ্ট জেব্রা ক্রসিং ও রোড মার্কিংগুলোকে দৃশ্যমান কিংবা স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৫. মূল সড়কের পাশে অবস্থিত স্কুল কলেজের ক্লাস শুরু এবং ছুটির সময় ওই এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ ও স্কুল কলেজের ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা এবং এসব অঞ্চলে যথাযথ ট্রাফিক সাইন স্থাপন করা।

৬. হাইড্রোলিক হর্ন, দ্রুতগতির যানবাহন, বেপরোয়া গতি, হুটার, বিকন লাইট, উল্টো পথে চলাচল এবং মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেটসহ সকল প্রকার ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিশেষ ট্রাফিক অভিযান এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।

৭. ঢাকা মহানগরী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ২৯টি পয়েন্টে স্থাপিত চেকপোস্টের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।

৮. ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের উদ্বুদ্ধ করা। সেখানে পুলিশ সদস্য মোতায়েন রাখা।

৯. গাড়ি চালানোর সময় স্টপেজ ব্যতীত সব সময় গাড়ির দরজা বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করা।

১০. জেব্রা ক্রসিংয়ের আগে স্টপ লাইন বরাবর গাড়ি থামানো এবং স্টপেজ ছাড়া যত্রতত্র গাড়ি থামানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাম লেন ঘেঁষে নির্ধারিত স্টপেজে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা নিশ্চিত করা।

১১. ভিডিও মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি করা।

১২. এর আগে মডেল করডোর হিসেবে ঘোষিত বিমান বন্দর থেকে শহীদ জাহাঙ্গীর গেট, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, কদম ফোয়ারা, পুরোনো হাইকোর্ট হয়ে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ভিআইপি সড়কের ইন্টারসেকশনসমূহে রিমোট কন্ট্রোল সরবরাহ নিশ্চিত করে স্বয়ংক্রিয় ও রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে সিগনাল পরিচালনা করা।

১৩. ফার্মগেট থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত রাস্তা গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা।

এসব বিষয়ে মহানগর ট্রাফিকের প্রধান মীর রেজাউল করিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত বছরের ট্রাফিক সপ্তাহ ও ট্রাফিক শৃঙ্খলা মাসের সফলতার পর আমরা এবারও ট্রাফিক শৃঙ্খলা কার্যক্রম শুরু করেছি। আমরা আশা করছি, এবার সড়কের শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর