নির্বাচন হয়েছে ‘আংশিক অংশগ্রহণমূলক’: টিআইবি

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-07-09 03:16:17

সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করলেও সমান সুযোগ নিশ্চিত না হওয়ায় নির্বাচন ‘আংশিক অংশগ্রহণমূলক’ হয়েছে বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্ট্যারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যালোচনার প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এমন দাবি করেছে সংস্থাটি।

৩০০ আসনের মধ্যে থেকে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ৫০ আসন বেছে নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করে টিআইবি।

গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ ৪০, জাতীয় পার্টি ৬, বিএনপি ১, গণফোরাম ২ এবং অন্যান্য দল একটি আসনে জয়ী হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সারাদেশের বেশিরভাগ কেন্দ্র আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের নেতাকর্মীদের দখলে থাকার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অনেকক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে সমর্থ হয়নি।

গত বছরের নভেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রাথমিক প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে প্রতিষ্ঠানটি।

টিআইবির সার্বিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমনে সরকারের ভূমিকার প্রেক্ষিতে অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশন নিরবতা পালন করেছে বা ক্ষেত্রবিশেষে অস্বীকার করেছে। ফলে সকল দল সমান সুযোগ পায়নি।

সংসদ না ভেঙে নির্বাচন করার ফলে সরকারে থাকার প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা আদায় করা ক্ষমতাসীন দল ও জোটের জন্য সহজ হয়েছে বলেও দাবি করেছেন টিআইবি।

টিআইবি জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরন বিধি লংঘনের প্রবনতা লক্ষণীয়। ভোটের দিনে সারাদেশে বেশিরভাগ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের নেতাকর্মীদের দখলে থাকার অভিযোগসহ বেশিরভাগ কেন্দ্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট ছিল না।

টিআইবির পক্ষ থেকে ৫০টি আসনে নির্বাচনের দিন সংগঠিত অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর নীরব ভূমিকা ৪২ আসনে, জাল ভোট দেওয়া ৪১ আসনে, নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে রাখা ৩৩ আসনে, বুথ দখল করে প্রকাশ্যে সিল মেরে জাল ভোট ৩০ আসনে, পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া ২৯ আসনে, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া ২৬ আসনে, ভোটারদের জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা ২৬ আসনে, ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া ২২ আসনের এক বা একাধিক কেন্দ্রে, আগ্রহী ভোটারদের হুমকি দিয়ে তাড়ানো ২১ আসনে, ব্যালট বাক্স আগে থেকে ভরে রাখা ২০ আসনে, প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মারধর করা ১১ আসনে, পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া ২৯ আসনে এবং ১০ আসনে কোনো এজেন্ট ছিল না।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭, জাতীয় পার্টি ২২, বিএনপি ৫, গণফোরাম ২, স্বতন্ত্র ৩ ও অন্যান্য দল ৯ আসনে জয়ী হয়। ভোটের দিন সারা দেশে ২৪ জেলায় নির্বাচনী সহিংসতার ফলে ১৮ জনের মৃত্যু হয় এবং ২০০ জন আহত হন বলে প্রদিবেদনে বলা হয়।

টিআইবির পক্ষ থেকে সুপারিশে বলা হয়, সৎ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া; নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ অন্যান্য অংশীজনদের দলীয় প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ রাখতে হবে; নির্বাচনে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগসহ নির্বাচনি আচরণবিধির বহুমুখী লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত ও তার ওপর ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ সময় টিআইবি চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, ‘এই নির্বাচনে প্রচুর ত্রুটি রয়েছে। আগামী নির্বাচনগুলোতে যাতে ত্রুটি না হয়, সেজন্য যে সরকারই আসুক না কেন, তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য এ ধরনের নির্বাচন ইতিবাচক নয়। এ জন্য আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছি।’

টিআইবির প্রাথমিক প্রতিবেদন পাঠ করেন সংস্থা গবেষক দলের শাহজাদা এম আকরাম।

এ সম্পর্কিত আরও খবর