‘শেখ হাসিনা খুশি হইয়্যা কিছু দিলে নিমু’

ময়মনসিংহ, জাতীয়

রাকিবুল ইসলাম রাকিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ), বার্তা২৪.কম  | 2023-08-31 10:35:08

খুঁটিতে বাঁধা কালো রঙের ছাতা। তার নিচে রাখা চেয়ার। সেখানে বসে আছে এক যুবক। আর সুন্দর শার্ট ও প্যান্ট পরিহিত এক বৃদ্ধ নরসুন্দর হাতে চিরুনি ও কাঁচি নিয়ে সেই যুবকের চুল কেটে যাচ্ছেন একমনে। দু’একজন পথচারী পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বৃদ্ধ লোকটিকে লক্ষ্য করে বলছে কী খবর নেতা?

পরক্ষণেই মাথা উঠিয়ে বৃদ্ধ লোকটি বলে উঠছে- কয়ডা দিনে যাইতে দেও, খালি চাইয়্যা দেখবা শেখ হাসিনা কেমন এই গেরামরে শহর বানাইয়্যা দেয়।

মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) গৌরীপুর পৌর শহরের কৃষ্ণচূড়া চত্বরে এ দৃশ্য দেখা যায়।

কথা বলে জানা গেল নরসুন্দরের নাম মো. রইছ উদ্দিন (৬১)। তিনি বোকাইনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। বাড়ি ওই ইউনিয়নের গড়পাড়া গ্রামে। বাবা মৃত উমর আলী। মা- নূরজাহান। চার ভাই এক বোনের মধ্যে রইছ বড়। পেশায় নরসুন্দর হলেও এলাকার লোকজন তাকে চেনে আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে।

এ প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে বলতেই এক যুবকের চুল কেটে চলেছেন রইছ। নিপুন কৌশলে হাতে চিরুনি ও কাঁচিতে ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং শব্দ তুলে কাজটি করছেন খুব সহজ ভাবে। চুল কাটা শেষে টাকা দিয়ে চলে যায় যুবক। অপর কাস্টমারের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে এ প্রতিনিধির সঙ্গে গল্প জুড়ে দেন রইছ।

তিনি বলেন, ‘সংগ্রামের আগে অভাবের পইড়্যা কেলাস ফাইভেই আমার লেহাপড়া শেষ হয়। পেটের দায়ে তহন আব্বার লগে থাইক্যা এই ক্ষুর-কাঁচির কাম ধরি। এরপর এমনেই কাইট্যা গেছে পঞ্চাশটা বছর।’

রইছের বাবা গত হয়েছে ২০ বছর। তার বৃদ্ধা মা ভুগছে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে। দাম্পত্য জীবনে রইছের স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তবে সন্তানরা সবাই বিয়ের পর আলাদা সংসার শুরু করেছে। বর্তমানে বৃদ্ধা মা ও স্ত্রীকে নিয়েই রইছের সংসার।

সপ্তাহের ৭ দিনের মধ্যে শনি ও মঙ্গলবার পৌর শহরে, বাকি ৫ দিন ইউনিয়নের বাজারে বসে নরসুন্দরের কাজ করেন রইছ। তার এখানে চুল কাটা ২০ টাকা, সেভ ১০ টাকা করে। প্রতিদিন তার আয় ৪ থেকে ৫শ টাকা। এই টাকা দিয়েই টানাটানি করে চলে বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসা ও সংসারের অন্যান্য খরচ। তবে সেখান থেকেও কিছু টাকা বাঁচিয়ে তিনি দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে খরচ করেন। এসব নিয়ে স্ত্রী কড়া কথা বললেও কর্ণপাত করেন না রইছ।

রইছ উদ্দিন বলেন, ‘সংগ্রামের পর যহন মুক্তিযোদ্ধা এমসিও হাতেম চাচা টিনের চুঙা দিয়া আওয়ামী লীগের বকতৃতা দিত, আমি হেই সময় থেইক্যা রাজনীতি করি। তাই দলের লোকজনেরে একটু চা-বিস্কুট খাওয়াইতে পারলে ভাল্লাগে। ৩০ তারিখের নির্বাচনেও নাজিম ভাইয়ের নৌকা মার্কার ইলেকশন করতে গিয়ে পকেট থেইক্যা ১৩ হাজার টেকা খরচ করছি। এইডা কোনো বিষয় না। নাজিম ভাই জিতছে, শেখ হাসিনা গদিত বইছে। এইডাই আমার শান্তি।’

এরই মধ্যে সকালের বেলা দুপুরে গড়িয়েছে। শীতের আকাশে ঝলমল করছে রোদ। হঠাৎ গল্পে এসে যোগ দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিন্টু। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় রইছ সম্পর্কে? জবাবে তিনি বলেন, ‘রইছ দুইশ টাকা আয় করলে একশ টাকাই দলের পেছনে খরচ করে। ৭৫ পরবর্তী সময়ে দলের দুর্দিনে রইছ উদ্দিনের মতো কর্মীরাই দলকে টিকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু দল একাধিকবার ক্ষমতায় থাকলেও হাইকমান্ড থেকে তিনি কোনো সাহায্য পাননি।’

দফতর সম্পাদকের কথার রেশ টেনে রইছ বলেন- ‘আমি মুজিব সেনা, সাহায্যের লেইগ্যা রাজনীতি করি না। তয় নেত্রী শেখ হাসিনা খুশি হইয়্যা কিছু দিলে আমি নিমু। কিন্তু আমার মতো কর্মীর খবর নেত্রীর কানে কে পৌঁছাইবো?’

এ সম্পর্কিত আরও খবর