নবাবগঞ্জে জনবসতি-কৃষি জমির পাশে ইটভাটা

ঢাকা, জাতীয়

মো.সাদের হোসেন বুলু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 01:28:27

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার ইছামতি নদীর তীরে জনবসতি এলাকা ও কৃষি জমির পাশেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটের ভাটা। টাকার বিনিময়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা, উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তাদের হাত করে বছরের পর বছর এসব ভাটার মালিকরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ এলাবাসীর।

স্থানীয়দের দাবি, উপজেলার অধিকাংশ ইটভাটারই বৈধ কাগজ নেই। আবার অনেক ইটভাটার মালিক উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এক নামে একাধিক ইটভাটা গড়ে তুলেছেন। কিন্তু অনুমোদন আছে একটি ইটভাটার।

আর এসব ভাটা মালিকরা প্রশাসনকে হাত করে কৃষি জমি ও নদীর তীরবর্তী ফসলি জমির মাটি দিয়ে ইটভাটায় ইট তৈরি করছেন। ভাটায় ইট পোড়ানোয় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছ। ফলে একদিকে যেমন ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণও ঘটাচ্ছে।

সাহেবখালী, কৈলাইল ও শিকারীপাড়া এলাকার একাধিক ভাটার শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বেআইনিভাবে গড়ে উঠা এসব ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। এলাকাবাসী কোনো অভিযোগ বা প্রতিবাদ করলে তাদের বিরুদ্ধে নেমে আসে বিভিন্ন রকমের অত্যাচার, হামলা-মামলার হুমকি। তাই কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পান না।’

উপজেলার কৈলাইল ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের দিপক রাজবংশী বলেন, ‘দৌলতপুর গ্রামে এস.এম অটো ব্রিক্স নামের একটি ইটভাটা নদী সংলগ্ন গ্রামের ভেতর স্থাপন করে বছরের পর বছর ইট তৈরি করছেন। ফলে এ এলাকায় জমির ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন ফলের আকারও ছোট হয়ে আসছে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, শিকারীপাড়া চুনাকাটিবিল এলাকায় অবস্থিত জেবিসি, কৈলাইলের দৌলতপুর গ্রামে এস.এম অটো ব্রিক্স, সাহেবখালীর জে.বি.সি, জেপিবি, মাঝিরকান্দা এলাকায় ডি.এন.বি ও শোল্লা পালিঝাপের এস.এসবি ব্রিকস্ (এ.এ.বি) কৈলাইল ইউনিয়নে জে.বিসি (এনডিএস)ব্রিকস, এনবিএস, কে.এইচ.বি ,জে.বি.সি (এনডিএস) নদী, খাল সংলগ্ন এলাকা ও জনবসতির পাশে ইটভাটা স্থাপন করে ইট তৈরি করছে।

দেশের প্রচলিত আইনে ইট পোড়াতে জ্বালানি হিসেবে কোনো গাছপালা ব্যবহার নিষেধ রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ভাটায় ইট পোড়াতে কয়লার পাশাপাশি বাঁশ ও গাছের গুঁড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে।

এছাড়া মাটি, গাছের গুঁড়ি ও বিক্রিত ইট পরিবহনের কারণে এই অঞ্চলের পাকা ও আধাপাকা সড়কগুলো বার বার সংস্কারের পরও সারা বছরই ক্ষতবিক্ষত থাকছে।

ইটভাটার মাটি আনা নেওয়ার কাজে ভারী যানবাহন চলাচল করায় পাড়াগ্রাম টু নবাবগঞ্জ রাস্তাটি অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া এলাকার কাচাঁ রাস্তাগুলো বেশ সংকীর্ণ। প্রতিনিয়ত ইটভাটার মালপত্র নিয়ে যানবাহন চলাচল করায় যাত্রী পরিবহনের গাড়িগুলোকে চলতে বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়।

এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরিফ রায়হান কবিরের সঙ্গে। নদীর পাড়, কৃষিজমি ও জনবসতি এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করার বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেনের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিবেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর