বোটানিক্যাল গার্ডেনে টেনিস কোর্ট!

বরিশাল, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল, বার্তা ২৪.কম | 2023-08-28 15:03:13

বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজে ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনে পুন:সংস্কার করা হচ্ছে টেনিস কোর্ট। এজন্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের নেট হাউস।

টেনিস কোর্টের কারণে কাটা পড়েছে কয়েকটি গাছও। বোটানিক্যাল গার্ডেনে রয়েছে নাগলিঙ্গমসহ বিভিন্ন বিরল প্রজাতির গাছ। কলেজের শিক্ষার্থীদের গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে গার্ডেনটি। তাই টেনিস কোর্ট পুন:সংস্কার করায় হুমকির মধ্যে রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেনের ওই বিরল প্রজাতির গাছগুলো।

কর্তৃপক্ষের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে উদ্যান রক্ষার চেষ্টা করছেন তারা।

জানা গেছে, স্বাধীনতার অনেক আগে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজের প্রথম গেট ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছিল একটি টেনিস কোর্ট। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালের পর শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য সেখানে বোটানিক্যাল গার্ডেন করেন নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা। রোপণ করা হয় নানা বিরল প্রজাতির গাছ। প্রায় ৭০ বছর পরে এসে সেখানে পুনরায় টেনিস কোর্ট নির্মাণ করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

কলেজের শিক্ষার্থী অন্বেষা দাস প্রমি বার্তা ২৪.কমকে বলেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনে বিরল প্রজাতির গাছ রয়েছে। যেটা নষ্ট হয়ে গেলে আমাদেরও ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাবে। এটা বিএম কলেজের সম্পদ। সেই সম্পদ রক্ষার্থে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

অন্য শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হক সাগর বার্তা ২৪.কমকে বলেন, এই গার্ডেন রক্ষায় আমরা ইতোমধ্যে স্মারক লিপি দিয়েছি। অধ্যক্ষ স্যার বলেছে শিক্ষার্থীদের একটা বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী যদি এই কাজটি বন্ধ করতে বলে। আমরা তাহলে বন্ধ করে দিবো। আর ইতিমধ্যে কাজটি স্থগিত রয়েছে। এছাড়াও গার্ডেন রক্ষায় গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জেলা সভাপতি সন্তু মিত্র বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিরল প্রজাতির গাছ সংরক্ষণ না করে, এটা নষ্ট করার নানা আয়োজন এখানে রয়েছে।  আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, এখানে কিভাবে প্রজাতির গাছ বাড়ানোর যায় এবং গবেষণার জন্য উন্মুক্ত করা যায়। সেই বিষয়গুলো নজর দেয়া যায়। কিন্তু সেই বিষয়গুলো প্রশাসন থেকে আমরা পাচ্ছিনা।

তিনি আরও বলেন, আমরা যখন ফি বৃদ্ধির কথা বলি, তখন তাদের বাজেট থাকেনা। কিন্তু এরকম একটা বিলাসবহুল খেলার জন্য তাদের কাছে বাজেট আছে।

উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনটি শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এই গার্ডেনে অনেকগুলো বিপন্ন গাছ রয়েছে। সেগুলো সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত এবং ছাত্রদের সেটা দেখাতে হয়।

ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলরের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা এই টেনিস কোর্টের পুনঃসংষ্কার কাজ শুরু করেছি। এটা সংস্কার করলে খেলাধুলার উপযোগী হবে। কোন গাছ কাটা বা পরিবেশের ক্ষতি করা এর সাথে যুক্ত নয়।

তিনি আরও বলেন, এটা সংস্কার করলে পরিবেশ কিংবা বোটানিক্যাল গার্ডেনের কোন ক্ষতি হবে না। এছাড়াও অন্য কোন জায়গায় এটা নতুন করে করা সম্ভব নয়।

অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষার্থীসহ পুরো শহরবাসী যদি মনে করে এটা সংস্কার করা ভালো। তাহলে এটা আমরা করব। তবে বেশিরভাগ লোকই যদি দ্বিমত হয়ে যায় ও মনে করে এটা প্রয়োজন নাই এবং পরিবেশের ক্ষতি হবে। তাহলে এটা আমি বন্ধ করে দেব।

জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আপাতত টেনিস কোর্ট নির্মাণে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তীতে টেনিস কোর্ট কোথায় হবে এবং বোটানিক্যাল গার্ডেনটি কিভাবে উন্নয়ন ঘটানো যায়।

জেলা প্রশাসক বলেন, কোনো গাছ কাটা হয়নি বলে কলেজ অধ্যক্ষ জানিয়েছেন। তারপরেও যদি কোন গাছ কাটা হয়ে থাকে তাহলে কলেজ কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করব।

উল্লেখ্য, টেনিস কোর্টটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর