পুরুষদের সমান সারাদিন মাঠে রোদে পুড়ে কাজ করি। ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির কাজ শেষ করে এখানে কাজে আসতে হয়। স্বামী দুই বছর আগে মারা গেছে, এখন অভাবের সংসারে দুই মেয়ে নিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতেও ২৫০ টাকা মজুরি পেয়ে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে— এভাবেই বলছিলেন ইটভাটার শ্রমিক খাদিজা বেগম।
খাদিজা বেগম নীলফামারী সদরের কচুকাটা বন্দরপাড়ার মৃত আজগার আলীর স্ত্রী ও দুই সন্তানের জননী।
খাদিজা বেগমের পরিশ্রমে দুই মেয়ে ও তার মুখে দুমুঠো ভাত উঠে। পুরুষের সমান কাজ করেও অর্ধেক মজুরি পান তিনি। বর্তমান সমাজে নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারি-বেসরকারিভাবে সভাসেমিনার করা হলেও পাঠ পর্যায়ে নেই এর প্রতিফলন। কর্মক্ষেত্রে নারীদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণের নেই কোন পদক্ষেপ। তবে দেশের শিক্ষা, কৃষি, অর্থনীতিসহ সব সেক্টরে নারীর পদচারণা রয়েছে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে নারীর হাতের ছোঁয়ায় কৃষিতে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানা যায়, নারীরা পুরুষের মতই ফসলের পরিচর্যা, তামাকের মিল কাজ, ধানের চারা রোপণ, মাটি কাটা, সড়ক সংস্কারের কাজ করেন। পুরুষের সাথে সমানতালে কাজ করলেও বেতন পান অর্ধেক। পুরুষেরা দিন শেষে পেয়ে থাকেন ৫০০ টাকা, আর নারীরা ২৫০ টাকা। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করেও বেতন বৈষম্যের শিকার তারা।
জেলা শ্রমিক উন্নয়ন সংগঠনের তথ্যমতে, জেলায় প্রায় দশ হাজার নারী বাসা-বাড়ি, কৃষি, হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে কৃষি ও হোটেল বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা নারীরা বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
এ-বিষয়ে খাদিজা বেগম আরও বলেন, অভাবের সংসারে অর্ধেক বেতন, খুব কষ্টে আছি । আমার মত অনেক নারীই পুরুষের সমান কাজ করেও অর্ধেক মজুরি পায়। আমরা পুরুষদের সাথে সমান তালে কাজ করি তবুও আমাদের বেতন কম দেওয়া হয়। সমান বেতন হলে ভালোই সংসার চলত।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা রহিমা বেগম বলেন, আমাদের ছুটি নেই। কাজে না এলে মজুরি নেই। বাজার, কেনাকাটা, থাকা, সব নিজেদের। কিছু সময় শরীরের অবস্থা এত নাজুক থাকে যে বাকি সময় অন্য কোনও কাজ করার ক্ষমতা থাকে না। এ কাজ করে কোনোমতে সংসার চলে।
নীলফামারী জেলা শ্রমিক উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম বলেন, নারী-পুরুষ একসাথে কাজ করে, তবু মালিকরা তাদের কম মজুরি দেয়। আমরা বিভিন্ন সময়ে সভায় তাদের সমান মজুরি দেওয়ার দাবি করি। নারী পুরুষের সমান মজুরি দিতে আমরা আগামীতে বিভিন্ন কোম্পানির মালিকদের সাথে বসব৷
নীলফামারী জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, সরকারি কাজ টিআর, কাবিখা, কর্মসৃজনসহ বিভিন্ন প্রকল্পে নারী পুরুষের সমান মজুরি দেওয়া হয়। বেসরকারি ও মালিকানাধীন কাজেও নারী পুরুষের সমান মজুরি এবং বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করছি।