দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থান নির্ধারণে ধীর গতি

ঢাকা, জাতীয়

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 11:51:24

বাংলাদেশে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থান নির্ধারণে ধীর গতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে বরিশালে মেঘনা নদীর তীরবর্তী চরমেঘায় স্থান নির্ধারণ করা হলেও সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি।

গত নভেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার এক দশমিক ৬৭ শতাংশ। যদিও ঐ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থান নির্বাচনে মোট খরচ ধরা হয়েছে ছয় কোটি ৫০ হাজার টাকা। যার মধ্যে গত নভেম্বর পর্ষন্ত এক কোটি ৫০ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে।

সম্প্রতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক পর্যবেক্ষণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রিভাইস অ্যানুয়াল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের (আরএডিপি) জন্য দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালককে শীঘ্রই বরাদ্দ চাইতে বলা হয়।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক এ এফ এম মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বরিশালের মেঘনা নদীর তীরে চরমেঘায় দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট স্থাপনে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করা হচ্ছে।’

‘এসব ইউনিট থেকে ১২০০ করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। স্থান নির্বাচন চূড়ান্ত হলে মূল অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হবে। এর পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে কেন্দ্রটি উৎপাদনে যাবে।’

বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সর্বাধুনিক থার্ড জেনারেশন প্লাস প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এ প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। কোনো রেডিয়েশন (বিকিরণ) হবে না।

দুই বছর আগে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশন (বিএইচইসি), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড ও পাবলিক ওর্য়াকস ডিপার্টমেন্টের সদস্যদের নিয়ে কমিটি করে আগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

কমিটি প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ করেছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশনের একটি টিম প্রকল্পের আটটি স্থান চিহ্নিত করে। স্থানগুলোর মধ্যে- চারটি খুলনা ও সুন্দরবনের কাছে এবং অপর চারটি হলো- বরগুনায় মাজের চর, পটুয়াখালীর গঙ্গামতী, নোয়াখালীর বয়য়ার চর ও ফেনীর মুহুরীর চর।

পরবর্তীতে বরিশালের মেঘনা নদীর পাড়ে চরমেঘায় স্থান নির্ধারণ করা হয়। তবে পরিবেশ ও প্রকৃতিগত ৬২টি দিক বিবেচনায় চরমেঘাকে উপযুক্ত জায়গা হিসেবে নির্বাচন করা হয়।

প্রসঙ্গত, প্রতি ঘরে নিরবিছিন্ন বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার অংশ হিসেবে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু হয়। একইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলে দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দেন।

এর অংশ হিসেবে প্রথমে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল) গঠন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে বরিশালের জেলা প্রশাসকের কাছে নদী-সাগরের তীরবর্তী দুই হাজার একর জমির প্রাপ্যতা, জমির মালিকানা ও জমি ব্যবহার সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্য জানতে চাওয়া হয়।

জবাবে জানানো হয়, হিজলার হিজলা-গৌরবদী ইউনিয়নের চরমেঘা মৌজায় দুই হাজার ২৫৬ একর খাস খতিয়ানভুক্ত জমি আছে। যা যেকোনো সময় প্রকল্পের কাজ শুরু করার যোগ্য, অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা না থাকায় বিপুল অর্থ সাশ্রয়, জনবসতি না থাকায় পুনর্বাসনের প্রয়োজন হবে না ও দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কম এবং সেখানে নৌ যোগাযোগ সুবিধা রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর