কাপ্তাই হ্রদ শুকিয়ে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে ৩ লাখ মানুষ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাঙামাটি | 2024-05-18 13:02:24

কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ হ্রদ হিসেবে পরিচিত রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে ৬ উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের যাত্রীবাহী লঞ্চ যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

এতে করে এ উপজেলাগুলোর প্রায় তিন লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ব্যাঘাত ঘটছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য পরিবহন। এছাড়া ৪২টি লঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৫ শতাধিক শ্রমিকের জীবিকায় ধস নেমেছে।

প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুম এলেই হ্রদের এসব চর খননের কথা বলা হলেও আদতে বিষয়টি এখনো পড়ে রয়েছে মন্ত্রণালয়ের ফাইলে।

অনাবৃষ্টি, খরা, তলদেশ ভরাটসহ পানির স্তর অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পেয়ে কাপ্তাই হ্রদ এখন প্রায় জীর্ণশীর্ণ জলাশয়ে রূপ নিয়েছে। নৌযান চলাচলের পথে ডুবোচর জেগে ওঠায় অসংখ্য ইউনিয়নে সব ধরনের নৌযান চলাচল ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

চর জেগে ওঠায় লংগদু, উপজেলা সদর বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়িতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

রাঙামাটি থেকে উপজেলাগুলোতে চলাচল করা লঞ্চগুলোর শ্রমিকেরা বর্তমানে বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন জানিয়ে রাঙামাটি নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দে জানান, হ্রদে পানি শুকিয়ে বিভিন্ন স্থানে জেগে ওঠা চরের কারণে অন্তত ৪২টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে করে প্রায় ৫শ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

এদিকে, রাঙামাটিতে আসা-যাওয়া করা যাত্রীরা জানান, হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় উপজেলাগুলোর সঙ্গে লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। এতে ১শ ৫০ টাকার ভাড়া ৭শ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। স্পিডবোটে করে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। এতে করে সাধারণ কৃষক ও খেটে-খাওয়া মানুষজনের অবর্ণনীয় কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।

কাপ্তাই হ্রদ শুকিয়ে যাওয়ায় রাঙামাটির সঙ্গে ৬ উপজেলায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ছবি- বার্তা২৪.কম 

এছাড়া এলাকার মানুষ যেমন করে খাদ্য-সামগ্রী নিতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন, তেমনিভাবে সেসব উপজেলা থেকে আনারস, কাঁঠাল, আমের মতো মৌসুমী ফল বাজারে আনতে নানা দুর্ভোগে পড়তে হতে হচ্ছে চাষীদের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে খরচ তুলতে না পাড়ায় মৌসুমী ফল বাজারেই আনেন না চাষীরা। ওই সব উপজেলার মানুষজন দ্রুত খনন করে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

এই সংকট সমাধানে কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিংয়ের দাবি জানিয়ে নৌযান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহন) রাঙামাটি জোনের সভাপতি মঈনউদ্দীন সেলিম বলেন, প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে গিয়ে এই দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। তিন মাসেরও বেশি সময় হ্রদে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। এর ফলে, একদিকে যেমন মালিক-শ্রমিকদের ক্ষতি হয়, অন্যদিকে যাত্রীরাও কষ্ট পান। সে কারণে আমরা অনেকদিন ধরেই কাপ্তাই হ্রদ খননের দাবি জানিয়ে আসছি।

হ্রদের নির্দিষ্ট কিছু অংশ ড্রেজিং করলে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক হবে। তখন নৌ চলাচলও স্বাভাবিক হবে। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির কারণে আমাদের দাবিটা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে।

কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি পাঠানোর কথা জানিয়ে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, কাপ্তাই হ্রদ খননের জন্য ৯শ ৭৭ কোটি টাকার একটি ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে আছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর