একটি বাঁধ হলে রক্ষা পাবে ৪০ হাজার বসত ভিটা

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর | 2023-12-15 15:51:07

তিস্তা নদী বেষ্টিত রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা। এই উপজেলার মানুষ প্রতি বছরই যুদ্ধ করে নদী ভাঙনের সাথে। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও আর খরার সাথে যুদ্ধ করতে করতে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তাই এখানকার নদীপাড়ের মানুষরা বন্যা শব্দটি শুনলেই আঁতকে উঠেন। ভয় পান নতুন করে আবার কিছু না হারায়।

 

নদী ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণের দাবি অনেক পুরনো। যে দাবিতে সাড়া দিয়ে বিগত সময়ে কিছু বাঁধ নির্মাণ হলেও বাদ পড়েছে বরাবরই অধিক ঝুঁকিতে থাকা শংকরদাহ গ্রাম। এ গ্রামে বাঁধ নির্মাণ হয়নি। একারণে এবারো বর্ষা মৌসুম আসার আগেই নড়ে চড়ে বসেছেন লক্ষীটারী ইউনিয়নের মানুষ। প্রতি বছরই বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয় এখানে।

যার ভয়াবহতা দেখা গেছে গত বছরের বন্যায়। লক্ষীটারী ইউনিয়নের শংকরদাহ থেকে বিনবিনিয়া পর্যন্ত একটি বাঁধ না থাকায় হুমকির মুখে পড়েছিল নবনির্মিত গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলো। ওই সময় তড়িঘড়ি কাজে কোনো রকমে নতুন সেতুর সংযোগ সড়ক রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু এবার শুধু সংযোগ সড়কই নয়, হুমকিতে আছে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষের বসত ভিটা।

শংকরদাহ গ্রামের মামুদ মিয়া, আবুল হোসেন, আজগর আলীসহ বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয়। তারা জানান, ‘বাঁধ নির্মাণ না হলে এখানকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। গত বন্যায় অনেক কষ্টে শংকরদাহ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি রক্ষা করা গেলেও এবার হয়তো সেই সুযোগ হবে না। এখন নদী ভাঙতে ভাঙতে বিদ্যালয়টির সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। শুধু বিদ্যালয়ই নয়, এখানে বর্ষা মৌসুম আসার আগেই বাঁধ তৈরি করা না হলে চাষাবাদের জমিসহ আশাপাশের প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার মানুষ বসত ভিটা নিয়ে আবারো ভাঙন কবলে পড়বে।’

ইউসুফ আলী নামে শংকরদাহ গ্রামের কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বন্যার সময় সকলে আমাদের কষ্ট দেখতে আসে। বন্যার পর আর কেউ খোঁজ নেন না। খুব খারাপ লাগে যখন সব কিছু চোখের সামনে ভেসে যায়। অথচ একটা বাঁধ থাকলে আমরা বন্যার ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতাম। আমাদের এলাকার মানুষদের বানভাসী হতে হয় না। আমরা গ্রামবাসী বাঁধের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান থেকে এমপিকে পর্যন্ত চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’

বিনবিনিয়া চরের বৃদ্ধ কৃষক আবুল কালাম বলেন, ‘বাঁধ হইলে খালি হামার মতো গরীব মাইনসের উপকার হবার নায়। যামরা মহিপুর-কাকিনা দিয়্যা সেতু ধরি যাওয়া আইসা করে ওমারো ভালো হইবে। শংকরদাহ থাকি বিনবিনা পর্যন্ত বাঁধ দেয়া জরুরী হইছে। বাঁধ নাইলে এবার হামারগুল্যার সাথে সাথে নয়া সেতুত যাওয়ার আস্তাঘাটের মারাত্মক ক্ষতি হইবে।’

এ ব্যাপারে লক্ষীটারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদির সাথে কথা বলা হয়। তিনি জানান, ‘আমরা জানি না কি কারণে শংকরদাহ থেকে বিনবিনিয়া পর্যন্ত একটা বাঁধ করা হয়নি। অথচ বাঁধের জন্য কয়েকবার আবেদন করা হয়েছে। ডিও লেটার নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দিয়েছে। গত বন্যায় রংপুরের জেলা প্রশাসক এসে নিজে দেখে গেছেন। কিন্তু বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ দেখছি না।’

বন্যা মৌসুমের আগেই বাঁধ নির্মাণ না হলে শংকরদাহ ও বিনবিনা চরের চল্লিশ হাজারের বেশি মানুষের বসত ভিটা ক্ষতিগ্রস্থ হবে দাবি করে চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখানে সাতটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। একটা কলেজ, দুইটা মাদ্রাসা আছে। বাঁধ না হলে নদী ভাঙনে এগুলো হুমকির মুখে পড়বে। এখানকার ৬০ হেক্টর চাষাবাদের জমি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’

এসময় দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি রেখে চেয়ারম্যান হাদি জানান, ‘শংকরদাহে বাঁধ নির্মাণ না করা হলে গত বছরের বন্যার মত আবারো নবনির্মিত গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতুর সংযোগ সড়ক হুমকিতে পড়বে। বিশেষ করে রংপুর ও লালমনিরহাটের সাথে মানুষের যাতায়াতের জন্য মহিপুর-কাকিনা সংযোগ সড়কটি বিচ্ছিন্ন হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর