ফেনীতে নেই বড় ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা, আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছে মানুষ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,ফেনী | 2024-05-27 16:39:11

প্রবল শক্তি নিয়ে উপকূল অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। ফেনীতে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানো হলেও এর তাণ্ডব খুব বেশি লক্ষ্য করা যায়নি। রিমালের প্রভাবে ফেনীর উপকূলীয় উপজেলায় সোনাগাজীতে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়া, ঘর-বাড়ির টিন উপড়ে যাওয়াসহ বিচ্ছিন্ন কয়েক জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি ব্যতীত কোন বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে ফেনী জেলাপ্রশাসন।

রিমালের প্রভাবে মধ্যরাত থেকেই ঝোড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি শুরু হয় ফেনীতে। সকাল থেকে থেমে থেমে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকে। এরমধ্যে বৈদ্যুতিক তারে গাছ পড়ে সম্পূর্ণ সোনাগাজী উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলার বেশকয়েকটি এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঝোড়ো বৃষ্টি হলেও সকালের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যায় সাধারণ মানুষ।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রিমালের জন্য প্রস্তুত ছিল জেলার ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্র। এরমধ্যে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন ৪৬৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২৬৫জন , মহিলা ১৩৮জন, প্রতিবন্ধী ১৯জন এবং শিশু ৪৬জন। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রের শেডে ৮৬টি গবাদিপশুকে নিরাপদে রাখা হয়। এরমধ্যে গরু-মহিষ ৬২টি এবং ছাগল-ভেড়া ২৪টি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলার কোথাও আহত বা নিহত নেই বলে নিশ্চিত করেছে প্রশাসন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুর রহমান জানান, এখন জোয়ার ও আবহাওয়া স্বাভাবিক আছে। মাঝে মাঝে মাঝারি বৃষ্টি এবং দমকা বাতাস বইছে। বাতাসে বিদ্যুতের তারে গাছ পড়ায় সোনাগাজী উপজেলায় বিদ্যুৎ নেই। পাশাপাশি অন্যান্য উপজেলার অধিকাংশ স্থান বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

তিনি জানান, জেলার কোথাও রাস্তা/বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেনি। ফসলাদি কিছু বাতাসে নুইয়ে পড়লেও উল্লেখযোগ্য কোন ক্ষতি হয়নি। সোনাগাজীসহ জেলার কোথাও মাছ/চিংড়ি ঘেরের ক্ষয়ক্ষতির কোন তথ্য নেই। তবে কয়েকটি ঘরবাড়ির চালের টিন উড়ে গেলেও জেলার কোথাও ঘরবাড়ি একেবারে বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি নদীতে ভাটা থাকায় নিম্নাঞ্চল/চরাঞ্চল প্লাবিত হয়নি বলে জানান তিনি।


তবে সোনাগাজীতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের কিছু ঘরবাড়ির টিন উপড়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

তৌহিদ রুদ্র নামে সোনাগাজীর একজন জানান, 'রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়েছে। সেগুলো অপসারণের জন্য লোক এসেছে। এছাড়া তেমন বড় কোন ক্ষতি হয়নি। জোয়ারের পানি স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি হলেও পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেনি।'

উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া এলাকার বাসিন্দা ও সিপিপির দলনেতা নুর নবী বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষতি থেকে মানুষকে সতর্ক করতে সিপিপি সদস্যরা এখনো মাঠে থেকে প্রচার চালাচ্ছেন। কিন্তু ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাস হলেও মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাইছেন না। যারা ছিল তাদের অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে চলে গেছেন।'

উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, 'যেকোনো দুর্যোগে এ ইউনিয়নের লোকজন বেশি ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। সকাল থেকে কয়েকটি এলাকা থেকে ক্ষয়ক্ষতির কথা শুনেছি। তবে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানান তিনি।'

সোনাগাজী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম বলাই মিত্র বলেন, 'রোববার রাতে ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে বেশ কিছু এলাকায় গাছপালা পড়ে তার ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মেরামতের পর বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হবে। তবে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে একটু সময় লাগবে।'

ফেনী আবহাওয়া দপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, 'ফেনীতে ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। আজ সারাদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।'

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, 'এখন পর্যন্ত উপজেলায় বড় ধরনের ক্ষতি কিংবা আহতের তথ্য নেই। বাতাসে কারও কারও ঘরের টিন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। উপজেলার কোথাও পানি উঠার কোন ঘটনা ঘটেনি। রাতে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ এসেছিল, অনেকের জন্য খাবারের ব্যবস্থা ছিল তবে অনেকেই রাতেই আবার ফিরে গিয়েছেন। বৃষ্টির আগেই ধান কেটে ফেলার ফলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি।'

এদিকে যেকোন পরিস্থিতে জরুরি সেবা প্রদান করার জন্য সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন জেলাপ্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার। তিনি জানান, 'সমগ্র জেলায় ৭৬টি মেডিক্যাল টিম গঠিত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মহিলা ও শিশুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল রাত থেকে আশ্রিতদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বাঁধ পরিস্থিতি ও নদীর পানি বৃদ্ধির গতিবিধি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।'

তিনি বলেন, ;উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীতে শুকনা খাবারের জন্য ২ লাখ টাকা, ২ মেট্রিক টন চাল, ১ লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও ১ লাখ টাকা গোখাদ্য ক্রয়ের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর