সৈয়দ আশরাফের অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করতে চান তার ছোট ভাই

ময়মনসিংহ, জাতীয়

উবায়দুল হক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, ময়মনসিংহ, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 22:53:37

আওয়ামী লীগের দুইবারের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আর এরপর থেকে এই আসনটিতে কে হচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলটির প্রার্থী তা নিয়ে চলছে তুমুল জল্পনা।

মুজিব নগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি প্রয়াত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের উত্তরাধিকারদের মধ্যে থেকেই আসনটিতে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারে আওয়ামী লীগ। তবে এক্ষেত্রে সর্বাধিক আলোচনায় রয়েছেন প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট ভাই মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম।

১৯৭০ সাল থেকেই বাবা এবং পরবর্তীতে বড় ভাইয়ের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার বাস্তব অভিজ্ঞতার কারণেই সৈয়দ আশরাফের জায়গায় তাকে নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক সচিবের দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ শাফায়েতুল। চৌকস এবং বিচক্ষণ সাবেক সেনা কর্মকর্তা হিসেবে এখনো বাহিনীতে সুনাম রয়েছে তার।

বড় ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হতে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নেত্রী সুযোগ দিলে অবশ্যই মানুষের সেবা করব। কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুরে সৈয়দ আশরাফের অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবো।’

এদিকে কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসন থেকে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। নিজের জীবদ্দশায় এখানকার রাজনীতিতে তিনিই ছিলেন শেষ কথা।

ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চমবারের মতো আসনটি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। গত ৩ জানুয়ারি সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশবরেণ্য এই রাজনীতিক।

সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পাশাপাশি বিকল্প প্রার্থী হিসেবে কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ওই সময় তার সহোদর দুই ভাই সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম ও সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলামও মনোনয়ন চেয়েছিলেন।

পরবর্তীতে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে ভোটযুদ্ধে জয়ী করতে দুই ভাই ও পরিবারের অন্য সদস্যরা ঐক্যবদ্ধভাবে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েন। সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম নির্বাচনের জন্য দেশে আসলেও সৈয়দ আশরাফের কুলখানি শেষে তিনি বিদেশ চলে গেছেন।

যুক্তরাজ্যে বড় হওয়া সৈয়দ আশরাফের একমাত্র কন্যা সৈয়দ রিমা ইসলামকেও দেশ বরেণ্য পিতার উত্তরসূরি হিসেবে ভাবনা-চিন্তা চলছিল। তবে রাজনীতিবিমুখ রিমা আরও সপ্তাহ দেড়েক আগেই কর্মস্থলে ফিরে গেছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত সৈয়দ নজরুলের পরিবার থেকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলামকেই দলীয় প্রার্থী করা হতে পারে বলে জোর আলোচনা চলছে।

প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পারিবারিক সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম ১৯৭০ সালে বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলামের নির্বাচনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সাল থেকে তিনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার স্ত্রী সৈয়দা নাজমা ইসলাম ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি।

সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে বড় ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময় থেকেই দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার।

আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) রাতে বার্তা২৪.কমকে সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘কিশোরগঞ্জকে একটি আদর্শ জেলা হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের। এখানে একটি কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় করতে চেয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘নরসুন্দা নদীকে ঘিরে রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিলের মতো নান্দনিক রূপে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এসব স্বপ্ন পূরণ করতে কাজ করতে চাই। তবে মনোনয়নের বিষয়ে নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। নেত্রী বললে, প্রার্থী হব।’

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর