শাল-গজারি ভরা ভাওয়াল গড়ের ভেতর বিপুল পরিমাণ বনভূমি দখল করে ৫০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠা বিলাসবহুল ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা সেন্টারটি পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দাপটেই ধীরে ধীরে গজিয়ে উঠে। পাঁচ তারকা মানের এই রিসোর্টে বেনজীরের দাপটে জমি দখল, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্ম চলতে থাকে। তবে অবসরে যাওয়ার পর সম্প্রতি বহু দুর্নীতির দায়ে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। এর পর একে একে বেরিয়ে আসে গাজীপুরে বেনজীরের সম্পদের তথ্য।
রোববার (২ জুন) অবৈধ দখলের অভিযোগ এনে গাজীপুরের ভাওয়াল রিসোর্টের মালিক, ম্যানেজার ও একই প্রতিষ্ঠানের অপর ম্যানেজারকে আসামি করে ঢাকার কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল হক, ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা ডা. সিরাজুল হকসহ ছয়জন বাদী হয়ে গাজীপুর প্রথম যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় বিবাদী করা হয় আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান মরহুম আবুল হাসেমের ছেলে মো. শওকত আজিজ রাসেল, গাজীপুর সদর উপজেলার উত্তর বানিয়ারচালা এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম মাস্টার, ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার ম্যানেজার সুমন ও একই প্রতিষ্ঠানের অপর ম্যানেজার মো. কামরুল ইসলামকে।
মামলার ভিত্তিতে অভিযুক্তদের আগামী ৬ নভেম্বর সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে জবাব দাখিলের নির্দেশ দেন বিচারক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের বারুইপাড়া মৌজার নলজানি এলাকায় বনভূমির ভেতর প্রথমদিকে কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কিনে ৯ একর জমিতে ছোট পরিসরে গড়ে তুলেন এই রিসোর্ট। পরবর্তীতে রিসোর্টের মালিকের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে বেনজীর আহমেদের। এরপর তার অদৃশ্য ক্ষমতা আর দাপটে ধীরে ধীরে শুরু হয় পাশে থাকা সাড়ে ছয় একর সরকারি শাল গজারি বনের জায়গা দখলের মহোৎসব। এক পর্যায়ে ৫০ একরের বিশাল এলাকাজুড়ে নির্মাণ করা হয় ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা। এছাড়াও আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দাদের জিম্মির মুখে ফেলে দখল নেন প্রায় ৩ একর কৃষি জমি। ফলশ্রুতিতে বিলাসবহুল রিসোর্টটির ২৫ শতাংশ শেয়ার লাভ করেন বেনজীর আহমেদ।
সরেজমিনে গেলে ভুক্তভোগী শফিউল্লাহ নামে এক ব্যক্তি বলেন, ভাওয়াল রিসোর্টের প্রধান ফটকে তৈরি পাহাড় ও ভেতরের অনেক জমি একসময় তাদের ছিল। কেনার কথা বলে মূল্য পরিশোধের আগেই জমিটি দখল করে নেন তারা। এ ঘটনায় বহুবার পুলিশের দ্বারস্থ হলেও নীরব ছিল পুলিশ।
এভাবে শুধু দখল বাণিজ্যই নয়, বন বিভাগের ডিমারর্গেসন, প্রশাসনের অনুমোদনসহ পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া গহীন বনে গড়ে উঠে এই রিসোর্ট। তবুও প্রশাসন ছিল নিরব ভূমিকায়।
এ ব্যাপারে বন বিভাগের ভাওয়াল রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুদ রানার সাক্ষাৎকার চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চান। এক পর্যায়ে বলেন, এর আগে উচ্ছেদের পরিকল্পনা করেই বদলি হয়েছে ঊর্ধ্বতন আরও দুই কর্মকর্তা।
তবে সম্প্রতি দুদক ও আদালতের নির্দেশনায় অনেকটাই তৎপরতা দেখাচ্ছেন গাজীপুর জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, অচিরেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বেদখল হওয়া বনভূমি উদ্ধার করা হবে। নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়েছে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে অভিযোগকারী পক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন সরকার জানান, মামলার বিবাদীরা বাদীপক্ষের কেনা জমি জোর করে দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। মামলায় ‘ক’ তফসিলের ১০২ শতাংশ জমি বাদীর ষোলআনা স্বত্ব ঘোষণা করে রায় ও ডিক্রি প্রদান, ‘খ’ তফসিলে ১০২ শতাংশ জমি থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ এবং অ্যাডভোকেট কমিশন নিয়োগ করে মাপজোকের মাধ্যমে দখল হস্তান্তরের আদেশ দিতে আদালতের কাছে দাবি করা হয়েছে।