শার্শায় সড়কে প্রশাসনের পশুর হাট, দ্বিগুণ ভ্যাট আদায়ের অভিযোগ

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর) | 2024-06-15 17:37:35

যশোরের শার্শার সাতমাইল সড়কের ওপর পশুর হাট বসিয়ে দ্বিগুণ ভ্যাট আদায়ের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

এছাড়া অবৈধভাবে রাস্তার ওপর গরু বেচা-কেনার সুযোগ করে দিয়ে সংশিষ্টরা ফায়দা লুটছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঈদের ঠিক আগে এ হাটে বেচাকেনা কম দেখা গেলেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় ছিল উপচে পড়ার মতো। তবে নাভারণ-সাতক্ষীরা সড়কের ওপর উপজেলা প্রশাসনের এ পশুর হাটের কারণে যানবাহন চলাচল ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

যানজটে সড়কটি পার হতে আগের চেয়ে সময় লাগছে বেশি। গত কয়েক বছর ধরে সাধারণ মানুষ এ দুর্ভোগ পোহালেও কারো কোনো মাথাব্যথা নেই এতে।

সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার দুই দিন এখানে হাট বসে। হাট থেকে লাখ লাখ টাকা ভ্যাট আদায় হলেও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। সরকার নির্ধারিত ভ্যাট ছাড়া হাট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দ্বিগুণ অর্থ আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। হাট সরকার পরিচালনা করলেও সেখানে আধিপত্য রয়ে গেছে ক্ষমতাসীন দলের একটি পক্ষের।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, গরুপ্রতি ভ্যাট ৫শ টাকা ও ছাগলপ্রতি ভ্যাট ২শ টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও হাট কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে গরুপ্রতি ১ হাজার ২শ টাকা ও ছাগলপ্রতি ৫শ টাকা ভ্যাট আদায় করছে।

এ হাট ইজারাদারদের দায়িত্বে থাকাকালীন প্রতি হাটে ১০ লাখের বেশি সরকারি খাতে ভ্যাট আদায় হলেও এখন উপজেলা প্রশাসন দায়িত্ব নিয়ে আদায় দেখাচ্ছে প্রতি হাটে ৩ লাখ টাকার মধ্যে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জানা গেছে।

গরু-ক্রেতা বেনাপোল পৌরসভার নামাজ গ্রামের রাশেদ ইসলাম অভিযোগ করেছেন, লাখ টাকার কিছু বেশিতে তিনি কোরবানির জন্য একটি গরু কিনেছেন। কিন্তু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৫শ টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও হাট কর্তৃপক্ষ জোর করে এক হাজার ২শ টাকা নিয়ে নিয়েছে।

গরু বহনকারী ট্রাকচালক রমজান জানান, জায়গার অভাবে তিনি ফুটপাথ ছাড়িয়ে সড়কের ওপর ট্রাক রেখে গরু ওঠাচ্ছেন। এতে পথচারীদের কাছে তাদেরও কম-বেশি কথা শুনতে হচ্ছে।

ইজারাদারদের দায়িত্বে প্রতি হাটে ১০ লাখের বেশি ভ্যাট আদায় হলেও উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বে আদায় দেখাচ্ছে প্রতি হাটে ৩ লাখ টাকা

দুর্ভোগের কথা স্বীকার গরু-বিক্রেতা কামাল হোসেন অভিযোগ করেন, আগে হাটটি ইজারাদাররা নিয়ন্ত্রণ করলেও বর্তমানে গরুর হাটের তদারকি করছে উপজেলা প্রশাসন। গরুর হাটটি আগে রাস্তার পাশে অবস্থিত একটি মাঠে থাকলেও এখন প্রধান সড়কের দুই পাশে এমন কী রাস্তার ওপর বেচা-কেনা হচ্ছে। ফলে, রাস্তার দুই ধারের দোকান-পাটগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে!

গরু-ক্রেতা যশোরের রমজান ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, গরুপ্রতি ভ্যাট ৫শ টাকা ও ছাগলপ্রতি ভ্যাট ২শ টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও হাট কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে গরুপ্রতি এক হাজার ২শ টাকা ও ছাগলপ্রতি ৫শ টাকা ভ্যাট আদায় করছে।

গরু-ক্রেতা আব্দুল জলিল বলেন, এই হাটের কারণে সবসময় গরুর মল ও আবর্জনা রাস্তার ওপর জমে থাকায় ও গরু বহনকারী ট্রাক, নসিমন, করিমনের ভিড়ে পথচারী ও যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এভাবে ব্যবসায়ীদের গরু বেচা-কেনার সুযোগ করে দিয়ে মহলটি প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা সুবিধা নিচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন এটি নিয়ন্ত্রণ করায় কেউ অভিযোগ করতেও সাহস পায় না।

বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক জানান, যখন গরুর হাট ইজারাদারের হাতে ছিল তখন দিনে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা সরকারের খাতে রাজস্ব আয় হতো। কিন্তু বর্তমানে এহাট উপজেলা প্রশাসনের হাতে থাকায় দিনে ৩ লাখ টাকা রাজস্ব আয় কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি এলাকার উন্নয়ন কাজও ব্যাহত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে শার্শার নাভারণ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) সিদ্ধার্থ সাহা জানান, পথচারীদের দুর্ভোগ এড়াতে সড়কের গা ঘেঁষে বা ওপরে গরুর হাট বসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে সাতমাইল গরুর হাটে যদি অনিয়ম হয়, তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার রাজবংশী সড়কের ওপর গরুর হাটে যানজটের কথা স্বীকার করে বলেন, সড়কের ওপর যাতে যানজট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। অতিরিক্ত ভ্যাট আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো ক্রেতা অভিযোগ করেননি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর