চট্টগ্রামের পশুর হাট, শেষ মুহূর্তে জমজমাট

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2024-06-15 20:27:53

আর মাত্র একদিন পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির এই ঈদকে ঘিরে শেষ মুহূ্র্তে জমে উঠেছে চট্টগ্রাম নগরীর স্থায়ী-অস্থায়ী সবকটি পশুর হাট। আরও দশদিন আগে থেকে বাজারগুলোতে আশে পাশের উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে করে গরু-ছাগল আনতে থাকে ব্যাপারীরা। শুরুর ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি থাকলেও শেষ সময়ের এসে বেচা-কেনা জমে চমছে।

শনিবার (১৫ জুন) দুপুরে নগরীর ষোলশহর এলাকায় অবস্থিত শতবর্ষী গরু বাজার বিবিরহাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলা থেকে কিছুক্ষণ পর পর বাজারের সামনে এসে থামছে গরু ভর্তি ট্রাক। বাজারের পাশে নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে একের পর এক নামিয়ে গরুগুলোকে সারিবদ্ধভাবে সাজানো হচ্ছে। একই সাথে ক্রেতার পাশাপাশি ভিড় জমাচ্ছে দর্শনার্থীরাও। এদের মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ। বন্ধু বা স্বজনদের নিয়ে গরু কেনার পাশাপাশি অনেকে দেখতেও আসছেন।

ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

বাজারের ভেতরে ঢুকতেই দেখা হয় হামজারবাগ থেকে আসা কামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি পাঁচ বছর বসয়ী ছেলে ইয়াসিরকে কোলে চড়িয়ে গরু দেখাতে নিয়ে আসছেন, কোলে থাকা ছেলেকে নিয়ে তুলছেন গরুর সাঙ্গে সেলফি। কামাল বলেন, 'ছেলে গরু দেখতে চাচ্ছে তাই বাজারে নিয়ে আসছি। গরু আরও পরে কিনব।'

গোপালপুর থেকে ১০টি গরু নিয়ে এই হাটে আসেন ব্যপারী জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, দুদিন আগে গরু নিয়ে এসেছি। এখনো একটিও বিক্রি করতে পারিনি। যে দাম চাচ্ছি তা পাচ্ছি না। এবার বাজার তেমন ভাল না। শেষে বিক্রি না হলে লস দিয়ে চলে যাব।

এই পশুরহাটে 'রাজ, জসিম ,কৃষ্ঞমালাসহ বিভিন্ন নামের ১৫ টি বড় আকারের গরু নিয়ে এসেছেন মাগুরার কবির বিশ্বাস।

তিনি বলেন, 'গরু বড় করতে যে পরিমাণ টাকার খাবার খাওয়ানো হয়েছে, একটু বেশি দামে যদি বিক্রি করা না গেলে পোষাবে না। আশা করছি আমরা ভাল দাম পাব। গরু বিক্রি করে ছেলে মেয়েদের নিয়ে আরাম আয়েসে খাব। তারপর মনকে বুঝাতে পারব যে, গরুগুলো যে এত কষ্ট করে বড় করেছি তার সুফল পেয়েছি। তবে আজকের যে হাট সেটি দেখে বুঝা যাবে দাম কেমন পাব।'

ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

একইভাবে নিজের খামারে মোটা-তাজা করা ১৯টি গরু নিয়ে আসেন চাপাইনবাবগঞ্জ রাহুল বলেন, ‘এবারের বাজারে তেমন দাম উঠছে না। প্রায় ৭শ কিলোমিটার দূর থেকে একটু বেশি লাভের আশায় চট্টগ্রামের মাটিতে অনেক টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে গরু নিয়ে এসেছি। নিজেরা থাকছি-খাচ্ছি, জায়গার ভাড়া দিছি। এবারও আমাদের লোকসান হবে মনে হচ্ছে।’

বেপারিরা জানান, এক থেকে দেড় মণ ওজনের গরুর দাম ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, দুই থেকে চার মণ ওজনের গরুর দাম দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা, পাঁচ মণ ওজনের গরুর দাম আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা, ১০ মণ বা তার বেশি ওজনের গরুর দাম চার থেকে ছয় লাখ টাকায় পাওয়া যাবে।

বড় ভাইয়ের সঙ্গে গরু কিনতে আসা ইব্রাহিম মুনতাছিল বলেন, ‘প্রথম ভাইয়ার সাথে গরু কিনতে এসেছি। বাজারের গরু দেখে ভাল লাগছে। তবে দাম তো অনেক বেশি।’

সেলিম উদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘গরু কিনতে এসে দেখি অনেক দাম। মাঝারি সাইজের একটি গরু দাম চাচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। ক্রেতা তো আসছে বাজারে। কিন্তু দরদামে হচ্ছে না। আগের বছরগুলো থেকে এবার দাম দ্বিগুণ।’

ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, এবার সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত প্রাণীর হাট রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে স্থায়ী তিনটি। সাগরিকা গরু হাট, বিবিরহাট গরু হাট এবং পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। অস্থায়ী ৭টি হাটের মধ্যে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কর্ণফুলী হাট (নুরনগর হাউজিং এস্টেট হাট), ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে পূর্ব হোসেন আহমদপাড়া সাইলো রোডের পাশের টিএসপি মাঠ, একই ওয়ার্ডে মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে বড়পোল সংলগ্ন মহেশ খালের দুই পাড়ের খালি জায়গা, ৩৯ নম্বর আউটার রিং রোডের সিডিএ বালুর মাঠ এবং ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম হালিশহর মুনিরনগর আনন্দ বাজার সংলগ্ন রিং রোডের পার্শের খালি জায়গা।

এদিকে, চসিকের অনুমোদিত দশটি প্রাণীর হাটের মধ্যে নয়টির ইজারাদার পাওয়া গেলেও তিন দফা দরপত্র আহ্বান করে ইজারাদার পাওয়া যায়নি বিবিরহাট হাটের। এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এ হাটটি নানা অনিয়মের কারণে জৌলুস হারিয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘এবার ঈদুল আজহায় চট্টগ্রামে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৫টি প্রাণী কোরবানি দেওয়া হবে। এর মধ্যে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৭৫টি গরু, ৭১ হাজার ৩৬৫টি মহিষ, ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮৩টি ছাগল, ৫৮ হাজার ৬৯২টি ভেড়া এবং অন্যান্য প্রাণী ৮৮টি। এর বিপরীতে কোরবানির জন্য মজুত রয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৯টি প্রাণী।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর