প্রাণ ফিরেছে লঞ্চে: ঈদের এক সপ্তাহ পরও ফাঁকা নেই ডেক ও কেবিন

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, বরিশাল | 2024-06-24 21:04:43

পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে প্রাণ ফিরেছে বরিশাল-ঢাকা নৌ বন্দরে। ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ পরও ফাঁকা নেই কোনো লঞ্চের ডেক ও কেবিন। এমনকি আগামী ২৮-২৯ জুন পর্যন্ত অগ্রীম বুকিং হয়েছে সব লঞ্চের কেবিন।

সোমবার (২৪ জুন) বিকেলে বরিশাল নৌবন্দর ঘুরে ৮টি লঞ্চ ঢাকার পথে যাত্রার জন্য প্রস্তুত পাওয়া গেছে। পারাবত, সুন্দরবন, অ্যাডভেঞ্চার, মানামিসহ ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে ৮ থেকে ১২টি লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ'র বরিশালের কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক।

তিনি জানান, ঢাকা থেকেও বরিশালের উদ্দেশ্যে ৮ টি লঞ্চ ছেড়ে আসবে। এই মুহূর্তে মোট ১৬টি লঞ্চ রোটেশন করা হয়েছে। প্রয়োজনে এ সংখ্যা আরো বাড়বে। তবে ঢাকা অংশে যাত্রীচাপ তুলনামূলক অনেক কম। তাই সেখানে লঞ্চ কম রাখা হয়েছে। এর আগে ১ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত বরিশাল নৌ বন্দর থেকে ২টি করে মোট চারটি লঞ্চ রোটেশন করা হয়েছিল। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকা সদরঘাটে চাপ বাড়তে শুরু করায় গত ১৫ জুন শুক্রবার থেকে ১০টি থেকে ২০টি লঞ্চ রোটেশন করা হয়। ১৬ জুন থেকে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানান আব্দুর রাজ্জাক।

এদিকে ঈদের পাঁচ-ছয় দিন পরেও টিকেট কাউন্টারগুলো ঘুরে জানা যায়, আগামী ২৭ জুন পর্যন্ত কোনো লঞ্চেই কেবিন ও সোফা ফাঁকা নেই। সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির পরিচালক মো. আকতার হোসেন জানান, বরিশাল রুটে তিনটি, ঝালকাঠি দুটি ও পটুয়াখালী দুটি মোট সাতটি সুন্দরবন কোম্পানির লঞ্চ ঈদ উপলক্ষে চলাচল করছে। একটিতেও ২৯ জুন পর্যন্ত কোনো কেবিন ফাঁকা নেই।

সোমবার সন্ধ্যার আগেই বরিশাল ঘাটে থাকা ৮টি লঞ্চেরই ডেক পরিপূর্ণ চোখে পড়ে। দুএকটিতে কিছুটা বিছানা পাতার সুযোগ থাকলেও কেবিন ও সোফা প্রায় সবই ফাঁকা ছিলো।

এ সময় চরকাউয়া এলাকার যাত্রী মনিরুল ইসলাম বলেন, লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ ভাড়াটা ৩০০ টাকায় সীমাবদ্ধ রাখলে তাদের যাত্রীর অভাব হবে না।

যদিও অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের সুপারভাইজার বেলাল হোসেন বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকার নির্ধারিত ভাড়া সাড়ে চারশত টাকা। আমরা তার চেয়েও কম নিচ্ছি। কিন্তু কেবিন বেশিরভাগ ফাঁকা থাকলে আমাদের চলাচল অসম্ভব।

শুভরাজ এর মালিকপক্ষের প্রতিনিধি ও সহকারী সুপারভাইজার আব্দুর রাজ্জাক জানালেন, পদ্মা সেতুর কারণে গত এক বছর ধরেই লঞ্চে যাত্রী শূন্যতা চলছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে গত প্রায় তিনমাস ধরে মালিক সমিতি ও বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা বৈঠকে রোটেশন করে দুটি করে লঞ্চ চালু রাখতে বাধ্য হয়েছেন।

একই কথা বললেন মানামি সুপারভাইজার শাহদাত হোসেন শুভ। তিনি বলেন, তেলের দাম না কমালে আগামীতে হয়তো অনেক লঞ্চ ব্যবসা গুটিয়ে নেবে। প্রতিটি ট্রিপে একটি লঞ্চের চার লাখ টাকা তেল বাবদ বরাদ্দ রাখতে হয় বলে জানান তিনি।

এ সময় লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি ও সুন্দরবন শিপিং এর চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা লোন আছে, শ্রমিকদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, সবমিলিয়ে প্রচণ্ড ক্ষতির মুখে আছে লঞ্চ ব্যবসা। ঈদ উপলক্ষে কিছুটা অবস্থায় পরিবর্তন ঘটলেও তা শুধু সবমিলিয়ে এক কি দুই সপ্তাহ। এরপর কি হবে?

রিন্টু আরো বলেন, এভাবে রোটেশন করে করে কতদিন চলা সম্ভব? এই ঈদ-পার্বণে আগে যেখানে ৩০-৪০টি লঞ্চ প্রতিযোগিতা দিত, সেখানে এখন সর্বোচ্চ ৭-৮টি থেকে ১৬টি লঞ্চ চলাচল করে। এ থেকেই লঞ্চ ব্যবসার ভবিষ্যৎ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তেলের দাম কমার পাশাপাশি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন সুন্দরবন নামের ১৫-২০টি লঞ্চের এই মালিক।

বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে নৌ যান চলাচলে কোনো বাধানিষেধ রাখা হয়নি। রুট পারমিট আছে এমন সব লঞ্চই ঈদ উপলক্ষে চলাচল করতে পারছে এবং করছেও।

এ সম্পর্কিত আরও খবর