চুয়াডাঙ্গার খাঁটি খেজুর গুড় যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়

, জাতীয়

অনিক চক্রবর্ত্তী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, চুয়াডাঙ্গা, বার্তা২৪.কম | 2024-01-03 20:25:44

চুয়াডাঙ্গার শহর, গ্রাম, পাড়া-মহল্লা সব জায়গাতেই পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম পড়েছে শীতের শুরু থেকেই। আর সেই পিঠাপুলি যদি তৈরি হয় খেজুরের গুড় দিয়ে, তাহলে তো আর কথাই নেই। খেজুর গুড়ের মুখরোচক পিঠাপুলির বাড়তি স্বাদ যেন আরও বেড়ে যায়।

 

এদিকে বাংলাদেশে খাঁটি খেজুর গুড়ের সন্ধানে কেউ যদি একটু খোঁজ করে তাকে অবশ্যই চুয়াডাঙ্গাতে আসতে হবে। এখানে প্রতি কেজি ভালো গুড় বিক্রি হয় ৮০ টাকা ও গুড়ের হাঁড়ি বিক্রি হয় ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে।

জানা গেছে, মাঘ মাসের বিকেল বেলা চাষিরা সব কাজ শেষে রস সংগ্রহের উদ্দেশে খেজুর গাছে উঠে ছোট ছোট হাঁড়ি ঝুলিয়ে রাখে। পরদিন সকাল বেলা রস সংগ্রহের পর তৈরি করা হয় খেজুরের গুড়। প্রতিবছরই শীতের শুরুতে জেলার গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে দেখা মিলবে খেজুরের রস দিয়ে তৈরি হচ্ছে গুড়। প্রতিদিন এসব গুড় গ্রাম থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে হাঁট-বাজারে বিক্রি করছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা চুয়াডাঙ্গায় এসে খেজুর গুড় কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ খজুর গুড়ের হাট এখন বেশ জমজমাট। ঢাকা, পাবনা, সাভার, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসে এই হাটে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যাপারীদের পদচারণায় সপ্তাহের দুই দিন মুখর হয়ে ওঠে হাটচত্বর। ক্রেতা বিক্রেতার মাঝে চলে দাম কষাকষি। গুড় কেনার পর মাটির হাঁড়ি সারি সারি ভাবে সাজিয়ে তোলা হয় ট্রাকে। আর এসব ট্রাকে করে খেজুর গুড় চলে যায় দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে।

হাঁটে গুড় কিনতে আসা পাইকারি ক্রেতা-ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার খেজুর গুড়ের দাম একটু চড়া। তবে আমদানির তুলনায় চাহিদা বেশি হলে সব জিনিসেরই দাম বাড়ে। খেজুর গুড়ের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। এমনটাই বলছেন গুড় বিক্রেতারা।

গাড়াবাড়িয়া গ্রামের গুড় বিক্রেতা মফিজ মিয়া জানান, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে সপ্তাহের যে দুদিন হাট বসে, সে দুদিনই এই হাট থেকে ২৫-৩০টি ট্রাকে করে খেজুর গুড় দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। পাইকারি ব্যাপারীরা কেজি দরের চেয়ে হাঁড়ি হিসেবে গুড় কিনতে অধিক আগ্রহী।

ডিঙ্গেদহ বাজারের বাসিন্দা খেজুর গুড় বিক্রেতা কামরুজ্জামান সেলিম জানান, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ হাটে শীত মৌসুমের সময় খেজুরের গুড় পাইকারি দামে বিক্রি করেন তিনি। ছোট হাঁড়ি ৭৮০ টাকা থেকে সাড়ে ৯শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় হাঁড়ির দাম আরও বেশি।

পাবনার শালগাড়িয়া থেকে আসা পাইকারি গুড় ব্যবসায়ী আরমান শেখ জানান, দিন দিন গুড়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা থেকে ৩ ট্রাক খেজুর গুড় কিনেছেন। ভালো গুড় হওয়ায় দাম একটু বেশি হলেও গুড় কিনে খুশি তিনি।

স্থানীয় সাধারণ গুড় বিক্রেতাদের দাবি, বাইরের জেলার পাইকারি বিক্রেতারা গুড় কিনতে এসে যেন কোনো প্রকার হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো উচিত। এ বিষয়ে যদি নজরদারি বাড়ে তাহলে ঐতিহ্যবাহী এই গুড়ের হাট আরও জমে উঠবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর