প্রশাসনিক অবহেলা, অবজ্ঞা, অন্যায়ের ফলে সুন্দরবনের মধু ভারতের জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন- ভৌগলিক নির্দেশক) পণ্য হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডির সিপিডি সেন্টারে সুন্দরবনের মধু ভারতে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সুন্দরবনের মধু ভারতের চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। আমরা যদি মূল উৎপাদনকারী হই, তাহলে ভারত কীভাবে একক উৎপাদনকারী হয়!
অতীতের নির্দেশনা উল্লেখ করে সিপিডির ফেলো বলেন, ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট বাগেরহাটের ডিসি সুন্দরবনের মধুকে বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো তা রেজিস্ট্রেশন হয়নি। এই দায় আমরা কাকে দেবো! অথচ ভারত আমাদের চার বছর পর ২০২১ সালে আবেদন করে তারা জিআই স্বত্ব পেয়ে গেছে।
ভারতের বাজার অনেক বড় উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরেও বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে কষ্ট হবে। কারণ, তাদের বাজার অনেক বড়। তাই, তাদের অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচও অনেক কম হয়।
এ সময় তিনি আরো বলেন, জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিতে কিছু লিস্ট করা হয়েছে কিন্তু এটাও কিন্তু পূর্ণাঙ্গ নয়। সার্ভে করে আমাদের পণ্য যেগুলি আছে, সেগুলি জিআইয়ের অধীনে আনার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
ভৌগোলিক পণ্যকে সুরক্ষা দিতে অভিন্ন আইনি কাঠামোতে যেতে হবে জানিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে থাকা পদ্ধতি পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা দেবে না। যেমন, বাসমতি চাল এক দেশে সুরক্ষা দেয়নি। এটি ভারত, পাকিস্তানে আছে। সে ক্ষেত্রে লেভেলিং করায় সমস্যা হচ্ছে।
নিজেদের পণ্যের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে জানিয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের সবগুলো পণ্যকে সম্পূর্ণ তালিকাভুক্ত করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ ও পর্যাপ্ত তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। এটা খুব দ্রুততার সঙ্গে করা সম্ভব।
এসময় তিনি দেশের জিআই পণ্যকে আন্তর্জাতিকীকরণের ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, আমাদের জিআই পণ্যের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। লিসবন-জেনেভা আইনের অধীনে অংশ নিতে হবে।
তিনি বলেন, ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের জন্য এখন সময় এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ব্যবস্থা আত্মস্থ করা। তবে আসল কথা হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি লাগবে।
বিষয়টিকে অনতিবিলম্ব সচিব ও মন্ত্রী পর্যায়ে আগামী যে কোনো বৈঠকে উত্থাপন করার প্রতি জোর দিয়ে তিনি আরো বলেন, সামনে যদি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আসেন তাহলে সেখানেও এটিকে উত্থাপন করা অবশ্যই উচিত।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দুর্বলতর অর্থনীতিকে সুরক্ষা দেয় আইনি কাঠামো। বাংলাদেশ যদি এলডিসি থেকে উত্তরণকে টেকসই করতে চায়, তাহলে অবশ্যই মেধাস্বত্বকে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ, এর সঙ্গে যুক্ত সমাজের দুর্বলতর পিছিয়ে থাকা ব্যক্তিরা।
তিনি বলেন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী কোনো জায়গায় বিকশিত হতে পারে না যদি মেধাস্বত্ব সুরক্ষিত করা না হয়! এখন মেধাস্বত্ব সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর সময় এসেছে। বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না যদি মেধাস্বত্ব আইনে সুরক্ষা না থাকে। এটা যে শুধু বিদেশিদের জন্য শুধু তা নয়, বাংলাদেশে হাজার হাজার ফ্রিল্যান্সার আছেন, তাদের সুরক্ষা কী! তাদেরও সুরক্ষা দিতে হবে। নতুন উদ্ভাবকদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্যও মেধাস্বত্ব সুরক্ষা দিতে হবে।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন- সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান ও সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।